গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক স্কুলে ও স্কুলের শিক্ষকগণ অবাধে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সরযূবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফেরদৌস আলম প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর স্কুল ভেতরেই বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের পাঠদান করান। 

ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ফেরদৌস তৃতিয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পাঠদান করছেন। এসময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত ওই শিক্ষক কোচিং ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে বের করে দেন।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোচিং নয় এই স্কুলের দূর্বল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিশেষ ক্লাস নিচ্ছি। তবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বিনামূল্যে নয় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এখানে ক্লাস করার জন্য প্রতি মাসেই টাকা দিতে হয়।

স্থানীয় কয়েকজন স্কুল শিক্ষক জানান, ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক সাক্ষরিত এক পত্রে স্কুলের ভেতর শিক্ষকদের অর্থের বিনিময়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের জন্য নির্দেশ দিলেও এই আদেশ মানা হচ্ছে না গৌরীপুরে।

অভিভাবক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফেরদৌস আলম এই স্কুলে যোগদানের পর থেকেই প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। কোচিংয়ে ক্লাস করানোর জন্য ওই শিক্ষক প্রতি মাসে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের ৫শ টাকা করে নেন। দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্যে এভাবে স্কুলের ভেতর কোচিং চালু রাখলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি এমন অভিযোগ স্কুল সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার বিকালে ৫টায় ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায় স্কুল শিক্ষক ফেরদৌস কোচিংয়ে ক্লাস করাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের শুরু থেকেই পঞ্চম, চতুর্থ ও তৃতিয় শ্রেণির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী টাকার বিনিময়ে এখানে কোচিং করছেন। তবে স্কুলে সাংবাদিক প্রবেশের ওই শিক্ষক বিনামূল্যে দূর্বল শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাচ্ছেন এমন কথা বললেও ভেতরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় পঞ্চম শ্রেণির রোল এক থেকে দশ, চতুর্থ শ্রেণির রোল এক দশ, তৃতিয় শ্রেণির রোল এক থেকে দশ এর ভেতরের শিক্ষার্থীদের ওই কোচিংয়ের ক্লাসে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় ওই শিক্ষক তাদের ছুটি দিয়ে চলে যেতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরদৌস আলম বলেন, আমি কোচিং করাই না। ছুটির পর দূর্বল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান করাই। বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধু ফুটবল টূর্নামেন্টের খেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারেনি। তাই ওদের ক্লাস নিচ্ছি। সাংবাদিক আসার পরপরই ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার রান্নার বাজার করতে হবে, তাই ছুটি দিয়ে দিয়েছি।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ওই শিক্ষক স্কুলে কোচিং করায় এই বিষয়টি আমার জানা নেই। এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য গৌরীপুর পৌর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম কোচিং এর নামে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্নপত্র বিলি করার ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়লেও কতৃপক্ষ কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

(এসআইএম/এসপি/জুলাই ০৪, ২০১৮)