মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : জেলার সিরাজদিখানের অধিকাংশ কৃষিজমি এখন পানির নীচে থাকায় কৃষকের তেমন কোন কাজ নেই। এ সময়ে অনেক কৃষক জমি থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করছে।

কোন পুঁজি ছাড়াই একশ’ কৃষক এবং বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণী-পেশার মানুষ এখন শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। শাপলা বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি পাইকারী হাট। জাতীয় ফুল শাপলা শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, শাপলা সাধারণত সবজি হিসেবে জনপ্রিয় ও বেশ উপকারী খাদ্য।

সরেজমিনে সিরাজদিখান ঘুরে দেখা যায়, বর্ষায় ডুবে যাওয়া সিরাজদিখানের ইরি, পাট ও আমন ধানের জমিতে এখন শাপাল আর শাপলা। যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই শাপলার সমারোহ। ইছামতি খালের বিলের পানিতেও শাপলা। শাপলা ফুলের সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়। শাপলা শুধু জমির চেহারা সাদা করে তোলে না বরং এর শুভ্রতা মানুষের মনকেও করে তোলে শুভ্র সতেজ। ক্ষণিকের জন্য হলেও বিমোহিত করে মানুষের মনকে। ভোর বেলায় শাপলার সৌন্দর্য আরও বেশী। সৌন্দর্য বিলিয়ে দিতে বেরিয়ে আসে কুড়ি থেকে ফুল। মেলে দেয় সাদা সাদা পাপড়ি। আবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে যখন সূর্যের তাপ বাড়তে থাকে তখন মুখ লুকিয়ে নেয় শাপলা। পাপড়ি গুটিয়ে আবার চলে যায় কুড়ির মাঝে। মনে হয় লজ্জা পাওয়া কোন নতুন বধূ। আবার পড়ন্ত বিকেলে লজ্জা ভেঙে বেরিয়ে আসে কুড়ি থেকে। সাধারণত আষাঢ় মাস থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা। এ সময় এলাকার শাপলা সংগ্রহকারী কৃষকেরা ভোর বেলায় নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমি ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ শুরু করে এবং শেষ করে দুপুরের দিকে। তবে মৌসুমের শেষ অর্থাৎ কার্তিক মাসে শাপলা তেমন বেশী পাওয়া যায় না।

নদী থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মোশারফ হোসেন জানান, এ সময়ে একেক জনে কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মোঠা (৭০ থেকে ৮০ পিস শাপলায় ১ মোঠা) শাপলা সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে একত্রে করে। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলায় শাপলা বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পাইকারী হাট। পাইকাররা এখানে বসে কৃষকের কাছ থেকে শাপলা সংগ্রহ করে পরে রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি পাইকারী বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়।

একটা সময় ছিল যখন অভাবী লোকজন জমি থেকে শাপলা কুড়িয়ে এনে সবজি বা ভাজি হিসেবে প্রতিদিন ভাতের সাথে খেয়ে জীবন বাঁচাতেন। আর আজ শাপলা একটি মজাদার খাবারে পরিণত হয়েছে। গরীর বা মধ্য বিত্তের মধ্যেই শাপলা তরকারী সীমাবদ্ধ নয়। এখন ধনী পরিবারেরও মজা করে শাপলা ভাজি বা তরকারী খাওয়ার রসনা বেড়েছে।

সরকারী হরগঙ্গা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী অধ্যাপক সুখেন চন্দ্র ব্যানার্জি বলেছেন, শাপলা একটি ভাল সবজি এবং এতে প্রচুর আয়রণ রয়েছে। যা রক্ত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপজেলার রসুনিয়া গ্রামের পাইকার লেলু মিয়া জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা তিনি ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ১০ থেকে ১২ টাকা দরে ক্রয় করে। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার খরচ ১ টাকা, আড়তদাড়ি খরচ ২ টাকাসহ মোট ১৭ থেকে ২০ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ি আড়তে এ শাপলা বিক্রি করে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে মোঠা। ৭০ থেকে ৮০টি শাপলার এই মোঠা খুচরা করে বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। শাপলা সবজি বা তরকারী হিসেবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য। গত কয়েক বছর যাবৎ এ ব্যবসাটি এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এতে করে বেকার কৃষকের কর্মসংস্থানের একটি সুযোগ হয়েছে। শাপলা বিক্রি করে শতাধিক কৃষক পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে আছে।