সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : প্রযুক্তিনির্ভর ও কলের লাঙলের প্রভাবে বিলুপ্ত প্রায় গরু দিয়ে কৃষকের সেই কাঠের লাঙলের চাষাবাদ। গরু দিয়ে লাঙলের চাষাবাদ একেবারেই কমে গেছে। এর ফলে দিন দিনই জমির উর্বরতা কমছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা । 

বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বোরো ফসল কেটে ঘরে তোলার পর যে সব উচু জমিতে আমন আবাদ করা হতো, সেসব জমিতে গরু দিয়ে কাঠের লাঙলের মাধ্যমে আষাঁঢ়-শ্রাবন দুই মাস চাষ করা হতো। একের পর এক দুই মাস জমি চাষ করার ফলে বৃষ্টিতে ভিজে মাটি পঁেচ জমির উর্বরতা বাড়ত। কিন্তু এখন কলের লাঙল বা ট্রাক্টর দিয়ে একদিন বা দুইদিনেই জমি চাষ করার ফলে জমির উর্বরতা তেমন বাড়ছে না।

উপজেলার চন্দগাতী গ্রামের কৃষক সাদেক শনিবার সকালে তার জমিতে আমন বীজতলা তৈরীর জন্য গরু দিয়ে লাঙলের সাহায্যে চাষ করছিলেন।

তিনি বলেন, ১০/১২ বছর আগেও আমরা গরু দিয়ে জমিতে হামাল তেচাষ অর্থাৎ (দুইবার তিনবার) গরুদিয়ে কাঠের লাঙলে মাধ্যমে চাষ করেছি। চাষের পর বৃষ্টিতে ভিজে মাটি নরম হতো। এতে জমির বাড়ত উর্বরতা।

কৃষক দুলাল বলেন, গরু দিয়ে হাল বাইলে গরুর লেদা (বিষ্ঠা) জমিতে মিশত কিন্তু এখন কলের লাঙল দিয়ে চাষ করে জমি রোপন করা হয় এতে জমির মাটি খুব নরম হয়না পঁচেও না। ইউরিয়া সার, মাটিয়া সার ও প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করে ফসল ফলানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, কলের লাঙল দিয়ে জমি চাষাবাদ করায় মাটির উর্বরতা দিন দিনই কমে যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাযায়, এবছর কেন্দুয়া উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এসব জমি শতকরা ৯৫ ভাগ কলের লাঙল দিয়ে চাষাবাদ করা হয়।

সাজিউড়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিক মিয়া বলেন, আগের সব নিয়ম বদলে গেছে, গরুদিয়ে কাঠের লাঙলের পরিবর্তে ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করা হয়। আগে ধান পাকলে কামলা শ্রমিক দিয়ে পাকা ধান কাটা হতো গরু দিয়ে হতো মাড়াই করা। তার পর গোলায় তোলা হতো। কিন্তু এখন ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ, ধান কাটা, মাড়াই করা হচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য শ্রম বিক্রি থেকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার মহাপাত্র জানান, জমির উর্বরতা বাড়াতে জৈবসার ব্যবহারের জন্য কেঁচু, গোবর দিয়ে কম্পোস্ট তৈরীর প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সব কৃষকরা কেচুঁ, গোবর দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করলে জমিতে জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে জমির উর্বরতা বাড়ানো সম্ভব হতো।

(এসবি/এসপি/জুলাই ০৭, ২০১৮)