নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া ডিগ্রি কলেজের আরবী বিষয়ের প্রভাষক মাসউদ রেজা (৪৩) হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিজ গৃহে সুস্থ অবস্থায় ফিরে এলেন। গত বুধবার দুপুর ১টার পর থেকে তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তার নিখোঁজ হওয়ার ৪ ঘন্টা পর প্রভাষকের স্ত্রী মোবাশ্বেরা বেগম থানায় এ বিষয়ে তথ্য জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

প্রভাষক মাসউদ রেজা শনিবার সকাল ১১টার দিকে বনপাড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে সাংবাদিকদের জানান, বুধবার দুপুরে কলেজে থাকাকালীন অবস্থায় অপরিচিত আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক যুবক তাকে এসে জানায় তার (ওই ছাত্রের) স্ত্রী কলেজে ভর্তি হতে আগ্রহী। কিন্তু মা এতে আপত্তি জানাচ্ছেন। ওই ছাত্র মাকে এ ব্যাপারে একটু বোঝাতে তার সাথে বনপাড়া পৌরশহরের কালিকাপুরে বাড়িতে যেতে বলেন ।

ওই যুবকের কথায় বিশ্বাস করে ওই যুবকেরই মোটরসাইকেলে চড়ে কলেজ থেকে বের হয়ে কালিকাপুর বাইপাস মোড়ে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া আরও ২/৩ জন যুবক তাকে ঠেলে-ধাক্কিয়ে রাজশাহীগামী বাসে উঠায় এবং এরপর তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। মাঝে মধ্যে তিনি জ্ঞান কিছুটা ফিরে পেলেও বুঝতে পারেননি তিনি কোন অবস্থানে এবং কোথায় আছেন। এরপর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরে দেখেন তিনি রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকায় বাসের সীটে বসে আছেন। বাসটি ছিলো ঢাকাগামী লোকাল বাস।

পরবর্তীতে তিনি মোবাইল ফোনে স্ত্রীকে সংবাদ দিলে দুই জন নিকট আত্নীয় রাত ১২টার দিকে কালিকাপুর বাইপাস মোড় থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কেন এবং কী কারণে কিডন্যাপ করা হলো জানতে চাইলে প্রভাষক মাসউদ সাফ জানালেন, আমিও ঠিক বুঝলাম না কেন আমাকে কিডন্যাপ করলো ও পরে ছেড়ে দিলো।

এদিকে কলেজ শিক্ষক মাসউদ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটিকে অনেকে বানোয়াট বলে মন্তব্য করছেন। একাধিক শিক্ষক, স্থানীয় সুধী সমাজ ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কলেজ শিক্ষক মাসউদ নিজের কোন ব্যক্তিগত সমস্যা বা অন্য কোন বিশেষ ঘটনার কারণে নিজেই নিখোঁজ ছিলেন। তার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী বা পরিবারের মধ্যে তেমন কোন উৎকন্ঠা দেখা যায়নি। তাকে জিম্মি করে কেউ টাকা দাবি করেনি। তার নিখোঁজ হওয়ার যাওয়া ও আসার পথ হিসেবে তারই গ্রামের বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জের সড়কপথ ছিলো। তিনি তিনদিন পর সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছেন। ফেরার সময় তার খুবই কাছের দুই আত্নীয় তাকে আনতে বাসস্ট্যান্ডে যান, পুলিশ বা অন্য কাউকে জানানো হয়নি। তাকে চেতনানাশক কোন ঔষধ দেয়া হয়েছে বলে কোন মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস জানান, শিক্ষক মাসউদ রেজা কারো দ্বারা কিডন্যাপ হয়েছে এমন প্রমাণ মিলেনি। বরং তিনি নিজ ইচ্ছেতে কোন বিশেষ কারণে আত্নগোপন করেছিলেন এমন ইঙ্গিত প্রায়ই দৃশ্যমান। তিনি আরও জানান, তার নিখোঁজ হওয়া ও ফিরে আসার ব্যাপারে পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে আসল রহস্য বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য, মাসউদ রেজার বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর গ্রামে। চাকুরীর সুবাধে দ্ইু ছেলেকে নিয়ে তারা বনপাড়া পৌরশহরের হালদারপাড়ায় বাড়ি কিনে বসবাস করে আসছেন।

(এডিকে/এসপি/জুলাই ০৭, ২০১৮)