রাজশাহী প্রতিনিধি : প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। আর এতে তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে কী করবেন তার একটি তালিকা দিয়েছেন। আর এতে রয়েছে ৮২টি কাজের ঘোষণা।

মঙ্গলবার প্রতীক পাওয়ার পর দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ইশতেহার প্রকাশ করা হয়।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুল খালেক ইশতেহারের ১৫টি বিষয়ের মোট ৮২টি প্রতিশ্রুতির প্রতিটি পড়ে শোনান। পরে এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন লিটন।

ইশতারের প্রথমেই রয়েছে কর্মসংস্থান। এতে গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে নগরীতে পোশাক শিল্প, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক দ্রুত বাস্তবায়ন করে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন লিটন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেশম কারখানা ও টেক্সটাইল মিল পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর। রাজশাহী জুটমিল সংস্কার, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন এবং কুটির শিল্পের সম্প্রসারণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে চান তিনি।

শিক্ষানগরী হিসেবে খ্যাত নগরীতে শিক্ষা নিয়েও অনেক কাজ করতে চান লিটন। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত বাস্তবায়ন, রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নতুন একাধিক বালক ও বালিকা স্কুল-কলেজ নির্মাণ, পূর্ণাঙ্গ সঙ্গীত, ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক মহাবিদ্যালয় স্থাপন ও বিশ্বের প্রধান প্রধান ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা, পুরো নগরীর নাগরিক কেন্দ্রগুলোকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা।

ইশতেহার অনুযায়ী, মেয়র নির্বাচিত হলে প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মাতৃসদন স্থাপন করে নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন আওয়ামী লীগ নেতা। দ্রুত শেষ করতে চান নিজের প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজ।

প্রস্তাবিত পানি শোধনাগার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করে নগরবাসীর বিশুদ্ধ খাবার পানিও সরবরাহ করতে চান লিটন। বস্তিবাসীর জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে তাদেরও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে চান তিনি।

ইশতেহারে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করে সহজ কিস্তিতে মালিকানা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আলেম ও সাংবাদিকদের জন্যও আলাদা আবাসন এলাকা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও এসেছে।

নির্বাচনী অঙ্গীকারে গুরুত্ব পেয়েছে শহরের অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টিও। এর মধ্যে নগরীর চারদিকে রিং রোড ও লেক নির্মাণের ঘোষণা এসেছে। নগরীজুড়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণশৌচাগার নির্মাণ, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাশ নির্মাণ, পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সাংষ্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লিটন। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ গড়ে তোলারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকাকালে নির্মল বাতাসের শহর হিসেবে সারাবিশ্বে সুনাম কুড়ায় রাজশাহী। এবার মেয়র হলে পরিবেশের সুরক্ষায় নগরীতে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লিটন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন ট্রেন এবং রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু করতে চেয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার।

এছাড়া পদ্মা নদী ড্রেজিং করে নৌ-চলাচল এবং নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে সাবেক এই মেয়রের এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা মার্কেট নির্মাণেরও ঘোষণা এসেছে ইশতেহারে। এসবের বাইরে ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়ন, প্রবীণ নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত, প্রবীণ নিবাস স্থাপন, প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, সিটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা, ঈমাম-পুরোহিতদের জন্য উৎসব ভাতা চাল এবং মাদকমুক্ত রাজশাহী গড়ে তোলার স্বপ্ন নগরবাসীকে দেখিয়েছেন লিটন।

মেয়রের দপ্তর নগরবাসীর জন্য সর্বদা উন্মুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়ে ইশতেহারে লিটন নগর ভবনকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের আমলে হোল্ডিং ট্যাক্স যেভাবে বেড়েছে তা কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বলছেন, এই ইশতেহার বাস্তবায়ন করে তিনি রাজশাহী নগরীকে একটি সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, ‘আমি মেয়র থাকাকালে উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই শহরকে সব সূচকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির যে গৌরব অর্জন করেছিলাম তা আজ প্রায় শূন্যের কোটায়। আমার সময় রাজশাহী শান্তি, সম্প্রীতি, সমৃদ্ধি আর পরিচ্ছন্ন সবুজের বাসযোগ্য নগরীর মর্যাদা লাভ করেছিল। এগুলো সব অতীত হয়ে গেছে। আজ তা পুনরুদ্ধার করতে হবে।’

‘রাস্তা প্রসস্ত করে যানজট থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে চাই। খাস পুকুরের ভরাট বন্ধ করতে চাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন, ‘মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সদ্য বিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের যদি কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়, কাগজপত্র হাতে আসে তবে সেগুলোর তদন্ত করা হবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাইদুর রহমান খান, কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেণী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সহ-সভাপতি তবিবুর রহমান শেখ, আওয়ামী লীগের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক দেবুসহ ১৪ দলের অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১০, ২০১৮)