রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহি গুড়পুকুরের মেলা চলাকালিন রক্সি সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামের লায়ন সার্কাসে বোমা হামলা মামলায় আদালতে না-রাজির আবেদন শুনানী শেষ হয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি সিআইডি’র পরিদর্শক আমীর হোসেনের দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদনের শুনানী মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।

ঘটনার বিবররণ জানা যায়, ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে সাতটা ও পৌনে আটটায় শহরে গুড়পুকুরের মেলা চলাকালিন যথাক্রমে রক্সি সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামে লায়ন সার্কাসে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় দেবহাটা উপজেলার চক মাহমুদপুরের হাফিজুর রহমান, সদর উপজেলার লাবসার কাজী রিফতাউল আলম মুক্ত ও শহরের ইটাগাছার সেলিনা পারভিন মারা যান। আহত হন ৫০ জনেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু। রাতেই লায়ন সার্কাসের ম্যানেজার মানিকগঞ্জ জেলা সদরের নবগ্রামের সন্তোষ সরকার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।মামলাটি সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাজাহান খান ১০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন।

পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ সিআইডি’র সহকারি পুলিশ সুপার মাওলা বক্স সন্দিগ্ধ সকল আসামীকে অব্যহতি দিয়ে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বিএনপি’র আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ধরণের বোমা হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও কাউকে সনাক্ত করা হয়নি। মামলায় আটককৃত মোমিনউল্লাহ মোহনের ১৬১ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের সনাক্ত করা হয়নি।

এ মামলা তদন্তকালে শেরপুর জেলার জামালপুর থানার ২০০৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ৫০ নং মামলায় আসামী বারিক হোসেন ওরফে রাসেল ওরফে হাফেজ মোহাম্মদ একটি হত্যার ঘটনায় বিচারক এজেড এম নুরুল হকের কাছে ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তাতে রক্সি সিনেমা হলে বোমা হামলার কথা স্বীকার করে।

এ ছাড়া বোমারু মিজানসহ জেএমবি’র শায়খ আব্দুর রহমানসহ কয়েকজনের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। যা’র যথাযথ তদন্ত হয়নি। একইভাবে মীরপুর থানার অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ৪০ নং মামলায় আসামী জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমারু মিজান ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারিক হাকিম মুন্সি আব্দুল মজিদের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় তাতে সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকা সহ চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেলেও যথাযথ তদন্ত হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের না-রাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে সিআইডি’র সাতক্ষীরা জোনের পরিদর্শক আমীর হোসেন জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে বোমারু মিজানকে একমাত্র আসামী হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর আগে আসামী বোমারু মিজানকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনতাই করে নেওয়া হয়।

এ মামলার তদন্তকালে আসামী রাকিব হাসান মীর্জাপুর থানা এলাকায় নিহত হন। জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানকে একটি মামলার রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা হয়। আসামী সাইফুল্লহ, মজিদ ও সুমনের ঠিকানা সঠিকভাবে জানা না যাওয়ায় তাদেরকে অব্যহতি দেওয়া হয়। তবে এ মামলার সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে মাওলানা ওবায়দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ও আবু নোমান মোঃ আমানউল্লাহ খুলনা থানার জিআর ১২৭১/৯৯ নং মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তারা গুড়পুকুরের বোমা হামলা মামলায় চুড়ান্ত প্রতিবেদন পেয়ে মঙ্গলবার জামিন আবেদন জানালে জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার তাদের জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি জানান, সিআইডি’র সাতক্ষীরা জোনের পরিদর্শক আমির হোসেনের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার আদালতে নারাজির আবেদন করলে মঙ্গলবার শুনানী শেষ হয়। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত বা পিবিআইকে পূণঃতদন্ত দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার বিকেল চারটা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোন আদেশ পাওয়া যায়নি।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১০, ২০১৮)