বিশেষ প্রতিবেদক : কয়েকদিন আগেও সারাদেশে মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে গা ঢাকা দিয়েছিলো একাধিক মাদক ব্যবসায়ী। টেকনাফে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একরাম খুন হলে এ অভিযানে ভাটা পড়ে। এবং পুনরায় প্রকাশ্যে চলে আসে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের মূল হোতারা।

এদিকে আসন্ন কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে মাদক ব্যবসায়ীদের রমরমা টাকার খেলা শুরু হয়েছে। কোন কোন স্থানে মাদক ব্যবসায়ী নিজেই প্রার্থী হয়েছে আবার কোথাও মাদক ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে প্রার্থীদের পেছনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- কক্সবাজার পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল হোসেন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে । যার প্রায় মামলা মাদক আর পুলিশের উপর হামলায় সরকার বাদী মামলা।

স্থানীয়রা এর মধ্যে অভিযোগ তুলেছে, ২ কোটি টাকা হাতে নিয়ে জনপ্রতিনিধির পদ ভাগিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই মাদক কারবারী।

এলাকায় চোলাই মদ আর ইয়াবার মূল ডিলার হওয়ায় বেলালের নির্বাচনী কাজেও ব্যবহার হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাদক কারবারী পর্যন্ত অনেকেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়- কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থানে প্রকাশ্যে পাইকারি দামে বিক্রি হয় চোলাই মদ। সেসব স্থান থেকে শহরের আরো অর্ধশতাধিক স্থানে ওইসব মদ পৌঁছে দেওয়া হয়। ওই চার স্থানে দৈনিক গড়ে ১০ হাজার লিটার মদ বিক্রি হয়। অভিযোগ রয়েছে, চার স্থানে চোলাই মদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে শহরের বইল্লাপাড়া এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল হোসেন।

তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে যার মধ্যে ৫টি মাদক মামলা আর একটি দ্রুত বিচার আইনে এবং একটি পুলিশের উপর হামলার এমনটি তথ্য পাওয়া গেছে।

যার মধ্যে অন্যতম কক্সবাজার সদর মডেল থানা মামলা নং- ২৮(৭)২০১৭, মামলা নং- ১৯(২)২০০৯, মামলা নং- ২০(২)২০০৯, মামলা নং- ৬(২)২০০৯, মামলা নংনং- ২৩(২)২০০৯, মামলা নং- ৩২(২)২০১৭, মামলা নং- ৩৩(৫)২০১৭।

শহরের বৈদ্যঘোনার বাসিন্দা প্রকাশ শর্মা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বৌদ্ধ মন্দির সড়ক থেকে বৈদ্যঘোনা পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে প্রকাশ্যে চলছে চোলাই মদের ব্যবসা। বৌদ্ধ মন্দির হয়ে বৈদ্যঘোনা এলাকায় হেঁটে আসায় দায় হয়ে পড়েছে। মদের উৎকট গন্ধে নাক চেপে ধরা ছাড়া উপায় নেই”।

ঘোনারপাড়ার বাসিন্দা ফরিদুল আলম বলেন, “দিনে যেমন তেমন রাতে তো এসব এলাকা মদখোরদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর কাউন্সিলর প্রার্থী নিজেই যখন এসব মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে তখন এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে কি হবে নতুন প্রজন্মের”।

জানা যায়, খাগড়াছড়ি-কক্সবাজার সড়ক, রাঙ্গামাটি-কক্সবাজার সড়ক, বান্দরবান-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি ও পিকআপে করে নিয়মিত চোলাই মদ প্রবেশ করছে শহরে। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান থেকে এসব মদ আসছে।

তবে সর্বোচ্চ মদ আসছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও আজিজনগর থেকে। এসব জেলায় বসবাসকারী আদিবাসীদের মদ তৈরি ও পান করা বৈধ। তবে মদ বাইরে বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু নিয়ম লঙ্ঘন করেই কক্সবাজার আলোচিত মদ ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন আদিবাসীদের কাছ থেকে চোলাই মদ কক্সবাজারে নিয়ে আসে।

গোপন সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার শহরেও গোপনে তৈরি করা হচ্ছে চোলাই মদ। প্লাস্টিক কন্টেইনার, প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে শহরের অর্ধশতাধিক খুচরা স্পটে মাদক পৌঁছে দেয় বেলাল সিন্ডিকেটের নিজস্ব বাহক।

গত ৫ বছরে শহরজুড়ে জমে উঠেছে বেলালের নিয়ন্ত্রনে চোলাই মদের ব্যবসা। কক্সবাজার জেলার সচেতন মহল মনে করেন- মাদক ব্যবসায়ীরা যদি জনপ্রতিনিধি হয়ে পড়ে তাহলে দেশ ও জাতির কোন উন্নতি হবে না উল্টো যুব সমাজ মাদক মূখী হয়ে পড়বে।

এছাড়াও মাদক ব্যবসায়ীদের নির্বাচনী অর্থের উৎস হলো মাদক সিন্ডিকেট তাই প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “প্রার্থী বাচাইয়ের সময় আমরা এবিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। তারপরেও খোঁজ খবর নিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবো।
সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল হোসেন বলেন, “এসব অভিযোগ মিথ্যা আমি কোন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নই। ওয়ান ইলেভেনের সময় আমি এসব মামলার শিকার হয়েছি। যার অনেক মামলা খালাস ও জামিনে মুক্ত রয়েছি। মুলত আমার জনপ্রিয়তা দেখে এসব করছে”।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার বলেন, “এসব মামলায় নির্বাচনের প্রার্থী হতে যদি কোন বাধা থাকে তবে সেটা জেলা নির্বাচন অফিস দেখবে। আমরা ওয়ারেন্ট থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো”।

(জেজে/এসপি/জুলাই ১১, ২০১৮)