রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রশিবির নেতা শেখ রিয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে পল্লী বিদ্যুতের লাইন সংযোগ দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রতিকার চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত সন্ন্যাসী চরণ মণ্ডলের ছেলে সমীর কুমার মণ্ডল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তবব্যে বলা হয় বিষ্ণুপুর গ্রামের বেশ কিছু লোকের বাড়িতে আজো বৈদ্যুৎ পৌঁছায়নি। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন বিষ্ণুপুর ইউপি’র নির্বাচিত চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন। সে অনুযায়ী নির্বাচন পরবর্তী বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে মিটার পিছু পাঁচ হাজার ২০০ টাকা লাগবে বলে তিনি তাকেসহ গ্রামবাসিদের জানান।

সে অনুযায়ী গত ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় তিনিসহ গ্রামের গোবিন্দ লাল সরদার, নেপাল তরফদার, কল্যান তরফদার, শহীদ তরফদার, প্রশান্ত সরদার, দেবদাস মণ্ডল, হলধর বৈদ্য, গোপীনাথ সিংহ, গোলাম রসুল, আব্দুল আজিজসহ ৭৩জন মাথাপিছু দু’ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে অনেকের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে বসে চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের হাতে দু’ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দেন। বাকী টাকা মিটার লাগানোর সময় দিতে হবে বলে তিনি বিদ্যুৎ গ্রহীতাদের জানান। দীর্ঘ দু’ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা আজো বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি।

সংবাদ সস্মেলনে আরো বলা হয় বতর্মান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে মিটার পিছু এক হাজার ১৫০ টাকা লাগার কথা। কিন্তু বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রতি মিটার বা বাড়ি পিছু অতিরিক্ত টাকা আদায় করে জনগনের সঙ্গে প্রতারণা করার পাশাপাশি সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করেছেন। প্রতিকার চেয়ে তিনি ২০১৮ সালের ১৪ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।

দুর্নীতির খবর পেয়ে গত ১১ জুলাই পল্লী বিদ্যুৎ পাটকেলঘাটা জোনাল অফিসের সহকারি প্রকৌশলী আহসান হাবিব ও খুলনা বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা বিষ্ণুপুর গ্রামে আসেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে প্রতারণার অভিযোগ করেন। ১২ জুলাই ঢাকা থেকে ফিরে খবর পেয়ে তার উপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন চেয়ারম্যান। এরই অংশ হিসেবে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চাঁচাই গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নাম করে তারসহ জয়পত্রকাটি গ্রামের সেনাবাহিনীতে কর্মরত শাহ আলম গাজী লাখ লাখ টাকা প্রতারণা করেছেন মর্মে দৈনিক পত্রদূত, দৈনিক কালের চিত্র, দৈনিক দক্ষিণের মশাল, সুপ্রভাত সাতক্ষীরা, গ্রামের কাগজসহ কয়েকটি পত্রিকায় গত ১৩ জুলাই ভিত্তিহীন খবর ছাপানো হয়। ওই সব পত্রিকায় ছাপানো প্রতিবেদনগুলো হুবহু এক, কোন ক্ষতিগ্রস্তের নাম না থাকা ও তার কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে না চাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে হয়েছে।

বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ১৯৮০-১৯৮১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে পড়াশুনা করাকালিন ছাত্র শিবিরের নেতৃত্বে দিতেন। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলে(বাসদ) যোগ দেন। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে তৎকালিন ঢাকা সিটি মেয়র ও আওয়ামী নেতা হানিফের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

জামায়াত শিবিরের প্রেতাত্মা আজো শেখ রিয়াজউদ্দিনের ভিতরে কাজ করায় বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ভাবমুর্তি নষ্ট করতে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে গ্রামবাসির কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে প্রতারণাকারি সাবেক শিবির নেতা বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পল্লী বিদ্যুতের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

শনিবার দুপুরে জানতে চাইলে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির করার কথা অস্বীকার করে বলেন, সমীর মণ্ডলসহ একটি গ্র“প গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নাম করে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে দায় তার উপর চাপিয়ে দিয়ে আত্মসম্মান নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

(আারকে/এসপি/জুলাই ১৪, ২০১৮)