স্টাফ রিপোর্টার : ‘মানুষের মাঝে ব্যাংক খাত নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে’- এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, ‘এটি ব্যাংকের জন্য একটি অশনি সংকেত। এসব সমস্যা কাটিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য সঠিক জায়গায় সঠিক লোক নিয়োগ দিতে হবে।’

শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এমন মন্তব্য করেন।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। আরও বক্তব্য রাখেন তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ব্যাংক এশিয়ার ডিএমডি মো. বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কনসালটেন্ট দেব প্রসাদ দেবনাথসহ অন্যরা।

ফজলে কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রফতানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এটা কেন হচ্ছে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা- সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নজর রাখছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের ঝুঁকি বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আমরা এটা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

গভর্নর বলেন, ‘সম্পদের সুষম ব্যবহার ও অপচয় রোধের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন ব্যবসাবান্ধব নীতি ও সংস্কার কার্যক্রম নেয়ার ফলে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখা সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কার্যক্রমের কারণে দেশ থেকে অর্থপাচারের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। সাম্প্রতিককালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ রাখার পরিমাণ কমে যাওয়া তার একটি বড় প্রমাণ।’

তিনি বলেন, ‘মানি লল্ডারিংয়ে শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ একসময় ৫২তম থাকলেও বর্তমানে ৮২তম স্থানে চলে এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অবস্থান বেশ ভালো। এটি ধরে রাখতে অপরাধমুক্ত, স্থিতিশীল ও দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এখন বিশ্বজুড়ে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

দেব প্রসাদ দেবনাথ বলেন, ‘মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের পরিমাণের দিক থেকে আমাদের অবস্থান ভারতের নিচে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে।’

‘বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাইবার ক্রাইম। এশিয়ার দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে আইনের শাসন ও সুশাসনের কিছুটা ঘাটতি থাকায় এখানে এ ঝুঁকির পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে।’

ব্যাংক এশিয়ার ডিএমডি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘দেশ-বিদেশে অর্থায়ন কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থ সন্ত্রাসের পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশও এ ঝুঁকির বাইরে নয়। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৪, ২০১৮)