গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধায় আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মো. এফতেখারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদে অভিযোগ, তার চাহিদা মতো টাকা না দিলে মেলে না প্রশিক্ষণে যাবার সুযোগ ও চুক্তিভিত্তিক চাকরির সিসি।

কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়,আনসার প্রশিক্ষণের জন্য একলাখ বিশ হাজার থেকে একলাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা,ভিডিপি প্রশিক্ষণে দশ থেকে পনের হাজার,গ্রাম প্রশিক্ষণে দশহাজার এবং আনসার সদস্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে জনপ্রতি বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তার কার্যালয়ে কর্মরত (রানার) আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য মো.ফজলু ও তার ড্রাইভার হামিদকে নিয়ে তিনি এই ঘুষ বাণিজ্যের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যাটালিয়ন সদস্য ও ওই কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন,২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর এফতেখারুল ইসলাম গাইবান্ধা জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে যোগদান করেন।যোগদান করার পর পরই তিনি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।তার চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়া পর্যন্ত কেউ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারে না।কোনও আনসার সদস্যের সিসি হয় না।ঘুষ না দিলে

মাপযোগ, প্রশিক্ষণের সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সহ যাবতীয় কাগজপত্র সঠিক থাকার পরেও নানা অজুহাতে বাতিল করে দেন। আর ঘুষ দিলে সব ঠিক হয়ে যায়।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের মহিমাগঞ্জ স্টেশন কলোনী এলাকার শহিদুল ইসলাম শুক্রবার (১৩ জুলাই) একুশ দিনের ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে এসেছেন।লাইনে দাড়ানোর পর তার মাফযোগ দেওয়া হয়।যাচাই-বাছাই করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র সহ যাবতীয় কাগজপত্র।

তিনি অভিযোগ করেন,আমার শারীরিক উচ্চতা পাঁচ ফুট সাড়ে সাত ইঞ্চি।এইসএসসিও পাশ করেছি।কিন্তু তাদের চাহিদা মতো টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।পরে আমি জেলা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে প্রশিক্ষণে যাবার সুযোগ চেয়ে অনুরোধ করি।এরপর তার নির্দেশে ওই ব্যাটালিয়ন সদস্য (যিনি টাকা চেয়েছিলেন) আমাকে মাঠ থেকে বের করে দেন।

ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের চর খাটিয়ামারী গ্রামের আশাদুল হক।গাইবান্ধা সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র তিনি। আশাদুল বলেন, খবর পেয়ে মাঠে এসে দাঁড়াই।মাফযোগ দেওয়ার পর যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে পনের হাজার টাকা চাঁন ফজলু নামের একজন ব্যাটালিয়ন সদস্য।

তাৎক্ষনিকভাবে আমি দশ হাজার টাকা তার হাতে দিয়েছিলাম।কিন্তু তার চাহিদা মতো না হওয়ায় আমাকে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

একই অভিযোগ করেন,সুন্দরগঞ্জের বেলকা গ্রামের রায়হানুল হক,পাঁচপীরের আব্দুস সালাম,চন্ডিপুরের মাহফুজুর রহমান, সাঘাটার পদুম শহর গ্রামের শফিকুল ইসলাম সহ অনেকে।

এ বিষয়ে জেলা কমান্ড্যান্টের রানার ব্যাটালিয়ন সদস্য মো. ফজলু মিয়া ও ড্রাইভার আব্দুল হামিদ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সকল প্রকার প্রশিক্ষণ ও চাকরির সিসি বড় কর্তার হাতে।এখানে তাদের কোনও হাত নেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কমান্ড্যান্ট মো. এফতেখারুল ইসলাম বলেন,জেলায় লোক নেওয়া হবে ৭০ জন।মাঠে দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক।টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

(এসআইআর/এসপি/জুলাই ১৪, ২০১৮)