রাজন্য রুহানি, জামালপুৃর : ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ব্রহ্মপুত্র নদে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনে মুখে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে ১৫টি ঘরবাড়িসহ অসংখ্য গাছপালা। হুমকীর মুখে পড়েছে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ভাঙ্গন আতংকে নদীপাড়ের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধসহ ভাঙ্গন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।

সরেজমিনে শনিবার গিয়ে নদীপাড়ের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জামালপুর শহরের হরিপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ঘুর্ণি¯্রােতে ১কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে হাশেম আলী,আজিজুল ইসলাম,নুরুল ইসলাম,মোফাজ্জল,মোন্তাজ আলী ও রহিজল মিয়াসহ ১৫ জনের বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদীভাঙ্গা এসব মানুষজন অন্যের বাড়িতে মাথাগুজার ঠাই করে নিয়েছে। ভাঙ্গন আতংকে গাছপালা কেটে বাড়ীঘর সরিয়ে নিচ্ছে নদী পাড়ের মানুষেরা।

নদী ভাঙ্গনের শিকার হরিপুর গ্রামের ভিক্ষুক রেনু বেগম(৬৫) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, স্বামী অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। ভিক্ষা করে কোনমতে জীবন চালায়। দুইদিন আগে একমাত্র মাথাগুজার ঠাই ছাপড়া ঘরটি নদীতে চলে গেছে। অন্যের বাড়ীতে গাছের নিচে অসুস্থ্য স্বামীসহ ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত কাটাইতেছি। এখন কি করমু ? চোখেমুখে অন্ধকার দেখতেছি। একই গ্রামের রিকসা চালক রহেজ আলী(৫০) বলেন, আশা সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়ে দুই শতাংশ জমি কিনে টিনের দু’চালা ঘর তুলেছিলাম। জমিসহ ঘরটি নদীতে চলে গেছে। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। এখন জমি কিনে ঘর বানামো কিভাবে,লোন পরিশোধ নিয়ে চিন্তাই আছি। সরকার আমগো পুর্ণবাসনের ব্যবস্থা না নিলে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাইতে হবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানায়, লিটনসহ প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ছনকান্দা থেকে হরিপুর পর্যন্ত নদের পাড়ে ২০/২৫টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভাঙ্গনের তীব্রতা।

স্থানীয় কাউন্সিলর ফজলুল হক জানান, যেভাবে নদী ভাঙ্গছে ১৫ ফুটের মধ্যে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। দ্রুত ভাঙ্গনরোধে ব্যাবস্থা না নিলে যেকোন মুর্হুতে মহাসড়কটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেছেন, নদীর গতি প্রবাহ ডান দিকে মোড় নিয়েছে। শুস্ক মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপর মহলে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

জামালপুর বালু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হবিবুর রহমান ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজারে প্রভাব পড়েনি, প্রকৃতিকভাবে নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেছেন, একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্ধ করলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পুর্ণবাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

(আরআর/এসপি/জুলাই ১৪, ২০১৮)