স্টাফ রিপোর্টার : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতন-গ্রেফতারের প্রতিবাদে শহীদ মিনারে নিপীড়নবিরোধী কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রবিবার দুপুর সোয়া ১২টায় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পাশাপাশি অবস্থান নেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও। পরে কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এতে পথচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধাওয়ার মধ্যেই ছাত্রলীগের একাংশকে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর চড়াও হতে দেখা যায়।

এরপর দুপুর পৌনে ১টায় শহীদ মিনারে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আজ পূর্ব নির্ধারিত নিপীড়ন বিরোধী কর্মসূচি ছিল শহীদ মিনারে। আমাদের মাইক চালু হওয়ার পর ছাত্রলীগও দাঁড়িয়ে যায় পাশে। তারাও মাইক ব্যবহার করে। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার চেষ্টাও চলে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করে ফেরার পথে আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়, শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। শিক্ষকদের চেতনা নিয়ে কটূক্তি করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

ফাহমিদুল হক বলেন, নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে শিক্ষক হিসেবে পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এমন কর্মসূচি যদি আমরা করতে না পারি তবে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জার। আমরা বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাবো।

অন্যদের মধ্যে এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তানজিম উদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিনা লুৎফর।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনও কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য অনুযায়ী কোটা নিয়ে কোনো আদেশ জারি করা না হলে ফের স্বোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা।

দ্বিতীয় দফায় আন্দোলনে নামলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘঠে।

এরইমধ্যে ১১ জুলাই সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের আদেশ রয়েছে। এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ আদালত অবমাননার শামিল হবে।

পরদিন জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বুধবার বলেছেন কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। যেখানে হাইকোর্টের রায় আছে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ওইভাবে সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে আমরা হাইকোর্টের রায় কীভাবে ভায়োলেট করবো। সেটাতো করতে পারছি না।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৫, ২০১৮)