নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণের পর নৃশংসভাবে খুন হওয়া ফরিদপুরের নগরকান্দার স্কুল ছাত্র অন্তরের পরিবারের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যা মামলার আসামীদের স্বজনেরা বাদী হয়ে পৃথক পৃথক ভাবে ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ৭ জুন সন্ত্রাসীরা অপহরণের পর নৃশংসভাবে খুন করে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র পাগলপাড়া গ্রামের গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে অন্তরকে। এরপর লাশ গুম ও মুক্তিপণ আদায় করে। এ ঘটনায় প্রথমে একটি অপহরণ মামলা হয়। অন্তরের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ওই অপহরণ মামলা এখন হত্যা মামলা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

এ মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের নিকট থেকে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে অন্তর হত্যাকান্ডের নৃশংস ও লোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, হত্যার আগে অন্তরের চোখ উপড়ে ফেলা হয়। এরপর জীবন্ত অন্তরকে উপুড় করে মাটিতে পুতে রাখা হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে অন্তরের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ আদায় করে খুনিরা। এরকম একটি জঘন্য হত্যাকান্ডের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় হয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী অন্তরের মৃতদেহ উদ্ধারের পর আসামীদের বাড়ি ভাংচুর করে এবং আসামীদের স্বজনদের কয়েকজনকে গণধোলাই দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। এসব ঘটনাকে পুঁজি করেই এসব পাল্টা মামলার অবতারণা বলে জানায় নিহতের স্বজনেরা।

জানা গেছে, অন্তর হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামী মাহবুব ও জুবায়েরের ভাই রাসেল বাদি হয়ে নিহত অন্তরের স্বজন ও নিরিহ গ্রামবাসির ২২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে।

দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৮/৪৪৮/৪২৭/৩২৩/৩৮০/৪৩৫/৪৩৬/৩৮৫/৫০৬(বি)/১১৪ ধারায় রুজ্জুকৃত এ মামলায় বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, চাঁদা দাবি ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে অন্তরের স্বজনদের বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অন্তর অপহরণ মামলায় অন্যতম আসামী খোকন মাতুব্বর ও আজাদ মাতুব্বরের পিতা বিলনালিয়া গ্রামের শেখ মোবারক বাদি হয়ে নিহত অন্তরের পরিবার ও প্রতিবেশীদের ২৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দন্ডবিধির ১৪৩/১৪৮/৪৪৮/ ৩২৩/৩৭৯/৪২৭/৩৮০/৩৮৫/৪৩৬/৫০৬(বি)/১১৪ ধারায় রুজ্জুকৃত এ মামলায় বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে ৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, মারপিট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। ডিআইও ওয়ানকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৩৫ জনকে আসামী করে আরেকটি মামলা করেছেন অপর আসামী পিপরুল গ্রামের রফিক ও মাসুদের বোন রুনা আক্তার। দন্ডবিধির ৪৪৮/৩২৩/৩৭৯/৩৮০/৪২৭/৪৩৬/১১৪ ধারায় রুজ্জুকৃত এ মামলায় বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে প্রায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, হত্যাচেষ্টা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত এ মামলার তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে নির্দেশ দিয়েছেন।

অপর একটি মামলার বাদি হয়েছেন অন্তর অপহরণ মামলার আসামী ছলেমান বেপারীর ভাই রেজাউল মাতুব্বরের স্ত্রী রেখা বেগম। দন্ডবিধির ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৪২৭/৪৩৬/৩৮০/৫০৬(বি)/১১৪ ধারায় ৩৪ জনকে আসামী করে রুজ্জুকৃত এ মামলায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, মারপিট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি তদন্তপূর্বক নগরকান্দা থানার পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নিহত অন্তরের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা অন্তর হত্যার বিচার চাই। কিন্তু এখন আমাদের বিরুদ্ধেই পাল্টা মামলা করেছে আসামীদের লোকেরা। আমরা এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিচার চাই।

এদিকে অন্তরের স্বজন ও নিরিহ গ্রামবাসিদের নামে মিথ্যা মামলা করার প্রতিবাদে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। রবিবার বিকালে স্থানীয় পাগলপাড়া বাজারে তালমা ইউনিয়ন সর্বস্তরের জনগনের ব্যানারে এক প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।

তালমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল ইমাম মজনুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন এলাকার ওয়াদুদ মাতুব্বর, প্রফেসর রনজিৎ মন্ডল, জাহাঙ্গীর হোসেন, মজিবুর মৃর্ধা, শাহাদৎ হোসেনসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।

(এনএস/এসপি/জুলাই ১৫, ২০১৮)