উত্তারাধিকার নিউজ ডেস্ক, ঢাকা : দীর্ঘদিনের পুরনো রেওয়াজ পহেলা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের হালখাতার। এদিন তারা লাল কাপড়ে বাঁধানো পুরনো হিসেবের খাতা বন্ধ করে, নতুন হিসেবের খাতা খুলেন। আজকের এই দিন ব্যবসায়ীরা বকেয়া আদায়ের জন্য ক্রেতা-গ্রাহকদের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। তাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়িত করেন। পুরনো হিসাবের খাতা বন্ধ ও নতুন খাতা খোলার আনন্দ-আয়োজন; আপ্যায়ন ও আনুষ্ঠানিকতার নামই হালখাতা। তবে নিত্য-নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যেমন ‘খাতা’য় বকেয়া লেখা কমেছে, তেমনি আবহমান বাংলা থেকে বিদায় নিতে বসেছে ক্রেতা-বিক্রেতার বন্ধন হালখাতাও।

গ্রামবাংলা-শহরে ছোট-মাঝারি-বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতার আয়োজন করা হতো বৈশাখের প্রথম দিন। এ উপলক্ষে ছাপানো হতো নিমন্ত্রণপত্র। মুসলমানদের নিমন্ত্রণপত্রে থাকত মসজিদের মিনারের ছবি, আর হিন্দুদের কার্ডে মাটির পাত্রে কলাগাছের পাতা, ডাব এবং উপরে দেবতা গণেশের ছবি। হালখাতার এই রেওয়াজটি সময়ের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে গেছে। বাংলা নববর্ষের দিনটিতে হালখাতার আয়োজন এখন তেমন চোখে পড়ে না, তবুও পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা হালখাতার এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।


পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, উর্দু রোড, চকবাজার, মোঘলটুলিতে ব্যবসায়ীরা রোববার বছরের শেষ দিনে ধুঁয়ে-মুছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নানা ফুল দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন তাদের প্রতিষ্ঠান। অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সামনে ইতোমধ্যে ‘শুভ নববর্ষ’, ‘শুভ হালখাতা’ লেখা ব্যানার-ফেস্টুনও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বছরের প্রথম দিনে মফস্বল এবং গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বকেয়া আদায়ের এই প্রথা ধরে রাখলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় নাগরিক জীবনে এ ঐতিহ্যের প্রভাব তেমন নেই। রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ শহরের বিপণি বিতান কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতার রেওয়াজ বছরের প্রথম দিনে দেখা যায় না।

(ওএস/পি/এপ্রিল ১৪,২০১৪)