রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ও দেলদুয়ার উপজেলায় চলছে বালু উত্তোলন। দীর্ঘদিন ধরে এই বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙ্গন। একদিকে ড্রেজার চলমান অন্য দিকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিলীন হতে চলেছে আশপাশের এলাকার বাড়িঘর ও আবাদি জমি। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরের বসতিরা।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী একটি মহল স্থানীয় কয়েকজনকে সাথে নিয়ে অবৈধভাবে ধলেশ্বরী ও এলেংজানী নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এ বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারনে এলাকাবাসী বার বার বাঁধা দেওয়ার চেষ্ঠা করলেও এখনো বন্ধ হয়নি বালু মহলগুলো। এলাকার কেউ এ বিষয়ে কথা বললে তাকেও বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো হয়। ফলে এলাকাবাসী কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রতিবছর বন্যায় প্রায় দেড় থেকে দুইশতাধিক পরিবার গৃহ ছাড়া হয়ে পড়ে। এছাড়াও মসজিদ,মাদ্রাসা, স্কুল ও হাজার হাজার ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। প্রশাসন বার বার অবৈধভাবে নদী থেকে ড্রেজার ধ্বংস করলেও পুনরায় চালু হচ্ছে ওইসব বালুর ঘাট।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীতে এখনো চলছে বালু উত্তোলন। কিছু দিন আগেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ৭টি ড্রেজার ধ্বংস করলেও সেখানে আবারো বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। অপরদিকে সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের এলেংজানি নদীর উপর চলছে প্রভাবশালী মহলের একটি ড্রেজার। এলাকাবাসী জানায় নুরু মিয়া ও উজ্জল মিয়া এ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তারপাশেই দেলদুয়ার উপজেলার দেউলি ইউনিয়নের মাইঠান এলাকার জাহাঙ্গীর মাতব্বরের আরেকটি ড্রেজার চলছে।

অপরদিকে দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের শাহধারীপাড়ার এলেংজানি নদীতে চলছে দুটি ড্রেজার। আর এসব জায়গা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছে বালু খেকোরা। অন্যদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। তারপরও চলছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলী জমি সহ নদী তীরের বাসিন্দারা।

হাসু মিয়া, ফজর মোল্লা, সিদ্দিক ও আমিনুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ নদীতে বালু উত্তোলন করছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকজন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। যেভাবে ড্রেজার চালানো হচ্ছে, তাতে মনে হয় এবছর আমাদের বাড়িঘর থাকবে না। গত বছর বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবছরও আবার নদীতে পানি আসতে শুরু করেছে। এখনও যদি ড্রেজার বন্ধ না করা যায় তাহলে আমাদের রাস্তায় গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে।

ড্রেজার শ্রমিকরা বলেন, ড্রেজার বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিলো। পরে ড্রেজার মালিকের নির্দেশে গত এক মাস ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর নদীর পানি বাড়ছে কিছুদিন পর তো আর বালু তোলা যাবে না।
ড্রেজার মালিক নুরু মিয়া বলেন, আমি সরকারি কাজে বালু উত্তোলন করছি। তবে আমার কাছে কোন লিখিত কাগজ নেই।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান বলেন, নদী থেকে যারা অভৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আমি খবর পাওয়া মাত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইল সদরের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার ধ্বংস, ড্রেজার মালিকদের শাস্তি ও জরিমানা করেছি। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন সুমি’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান। যেহেতু বিষয়টি জানলাম এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ১৬, ২০১৮)