নওগাঁ প্রতিনিধি : পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। কোন প্রকার টাকা ছাড়াই সকল ধরনের সেবা মিলছে নওগাঁ সদর মডেল থানায়। সেবা নিতে আসা জনসাধারন জিডি, অভিযোগ ও মামলা লেখাতে বা অন্তর্ভূক্ত করতে এলে কোন রকম টাকা দিতে হয়না তাদের। আর এমনই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে, সম্প্রতি যোগদানকৃত থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল হাইয়ের বলিষ্ঠ ভুমিকার কারনে। পুলিশ যে টাকা ছাড়া কাজ করে, এমন বিরল দৃষ্টান্ত নওগাঁ সদর মডেল থানা। এতে সহকর্মীদের কাছে কিছুটা বিরক্তির কারন হলেও আইনগত সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষের কাছে ইতোমধ্যেই বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তারা বর্তমান সরকারের সময়ে ঠিক এমনটিই আশা করছিলেন পুলিশের কাছে।

জানা গেছে, ইতোপূর্বে থানায় একটি জিডি লিখতে লেখককে দিতে হতো ১শ’ টাকা। ওই জিডি অন্তর্ভূক্ত করতে ডিউটি অফিসারকে দিতে হতো কমপক্ষে ১শ’ টাকা। অভিযোগ লিখতে ১০০/২০০ টাকা, লিখিত অভিযোগটি অফিসার ইনচার্জের অনুমতি সাপেক্ষে কোন এসআই কে দায়িত্ব দেয়াতে দিতে হতো কমপক্ষে ২ হাজার টাকা। এজাহার লিখতে ১০০/২০০ টাকা মামলা রেকর্ড করাতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। বর্তমান অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই নওগাঁ সদর মডেল থানার দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকে কোন রকম টাকা পয়সা দিতে হচ্ছে না সেবা নিতে আসা ভূক্তভোগীদের। এছাড়া থানা দালালমূক্ত করার সর্বময় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ওসি মোঃ আব্দুল হাই।

নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী রহিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন পর নওগাঁ সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করতে যাই। আমার বিষয়টি ওসি আব্দুল হাই স্যারকে অবহিত করলে মনোযোগ সহকারে তিনি শুনে অভিযোগ লিখে নিয়ে আসতে বলেন। থানার গোলঘরে ডিউটিরত একজন অফিসার আমার কথামত অভিযোগ লিখে দেন। লেখার জন্য টাকা দিতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা লাগবে না। পরবর্তীতে অভিযোগের বিষয়ে এসআই হরেন্দ্রনাথকে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পাঠালে দুই লাখ টাকাসহ আসামীর স্ত্রী ও শ্যালককে আটক করে থানায় নিয়ে এসে দুই দিনের মধ্যে ট্রাক্টরটি বের করে দেয়ার মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন। তাদের নিকট গচ্ছিত আমার দুই লাখ টাকা আমাকে ফেরত দেয়ার পর আমি ওসি স্যারকে কিছু সম্মানী দিতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদের সেবা দেয়ার জন্য সরকার আমাকে বেতন দেন। আপনার সম্মানী দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

শৈলগাছী ইউনিয়নের রামরায়পুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তার মেয়েকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী এক ছেলে পালিয়ে গেলে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি স্যারের নিকট গিয়ে জানালে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। রাত্রী অনুমান ১টার সময় অভিযোগপত্র ডিউটি অফিসার এএসআই আয়নুলের নিকট জমা দিয়ে আসি। পরদিন বিকেলে এসআই মামুন ঘটনাস্থল তদন্ত করে অভিযোগের ৪৪ ঘন্টার মধ্যে কোন রকম মামলা রেকর্ড ছাড়াই আমার মেয়েকে উদ্ধার করে দেন। এব্যাপারে থানা পুলিশকে কোন রকম টাকা দিতে হয়নি। আমাদের মতো গরিব মানুষ পুলিশকে টাকা না দিয়ে এত ভালো সেবা পাবো এটা ভাবতেই পারিনি।

থানায় জিডি করতে আসা একেএম ফজলুল হক জানান, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ট্রান্সপার হয়ে নওগাঁ ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য তার থানায় একটি জিডি করার প্রয়োজন হওয়ায় থানায় একটি জিডি করাতে এসেছিলেন তিনি। থানা মানেই টাকা খরচ না করলে কোন কাজ হবে না এমনটাই ধারনা ছিল তার। জিডি লিখতে বা অন্তর্ভূক্ত করতে যে একটি টাকাও খরচ হয় না এ্টা তার জানা ছিলো না।

পাবনা জেলার সুজানগর থানার তাঁতীবন্দ গ্রামের স্কুল শিক্ষক হাসান আলীর ঘরে পহেলা জুন ১৯৭৪ সালে জন্ম গ্রহন করেন মোঃ আব্দুল হাই। পিতা-মাতার ৮ পুত্রের মধ্যে সপ্তম নম্বর তিনি। তাঁতীবন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারী পাশ করে সুজানগর হাইস্কুল থেকে ১৯৯১ সালে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে এমএ পাশ করেন। ১৯৯৮ সালে এসআই হিসেবে পুলিশের চাকুরিতে যোগদান করেন।

পিএসআই হিসেবে তিনি নওগাঁ সদর থানাতেও চাকুরি করেছেন। তার কর্ম দক্ষতা ও মেধায় ২০১০ সালে পুলিশের ওসি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। সম্প্রতি নাটোর জেলায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবির) অফিসার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার বদলীর অর্ডার হয় নওগাঁ সদর মডেল থানায়। গত ২৭ মে/১৮ তারিখে তিনি যোগদান করেন নওগাঁ সদর মডেল থানায়।

(বিএম/এসপি/জুলাই ১৬, ২০১৮)