রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অব্যহত কু’প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে বাপের বাড়িতে ফেলে চুলের মুঠো ধরে ঘর থেকে বের করে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। এ সময় তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও চার হাজার ৭০০ টাকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।  নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে গত ৭ জুলাই তালা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িতে যেতে পারছেন না ওই নারী।

অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত তালা থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলামের প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকার কারণে হামলাকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের উত্তম কুমার পালের মেয়ে অম্বিকা রানী পাল জানান, ২০০৮ সালে তার সঙ্গে বাগেরহাট সদরের রাখালগাছি গ্রামের প্রদীপ কুমার ঘোষের বিয়ে হয়। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় একমাত্র সন্তান দেবব্রতসহ ২০১৩ সালে তাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি বাপের বাড়িতে অবস্থান করছেন। দেড় বছর আগে তিনি মীর্জাপুরের একটি বেসরকারি ঋণদান সমিতিতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাপের বাড়িতে থাকার কারণে কৃষি বিভাগে কর্মরত প্রতিবেশী পীযুস পাল তাকে বিভিন্ন সময়ে কু’প্রস্তাব দিতো। রাজী না হওয়ায় সে এলাকার যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, অলিয়ার রহমান, বাবু রহমানসহ কয়েকজনকে লেলিয়ে দেয় পীযুস। তারা বিভিন্নভাবে কু’প্রস্তাব ও হুমকি ধামকি দিতো। বাপের বাড়িতে থাকতে গেলে তাদেরকে চাঁদা দেবার কথা ও বলা হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২৮ জুন বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পীযুস পালের ০১৯২৭-০২২৬৭২, খায়রুল ইসলামের ০১৯৮৫- ৫২৩০১৪, আসাদ মেম্বরের ০১৭২৩-৬৭৬১৮১ ছাড়াও ০১৫৮০-২৮৪৮৪৬ ও ০১৫৩৭- ৪৭৮৫৭৭ নম্বর থেকে কয়েকবার কল দিয়ে কু’প্রস্তাব ও হুমকি দেওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যার সময় তিনি অফিস থেকে ইসলামকাটি মোড়ে পৌঁছানো মাত্র তার সমিতির সদস্য ত্রিশ মাইল এলাকার শাহানারার দেবর শাহীনের সঙ্গে তার দেখা হয়। সে যে ভ্যানে ছিল সেই ভ্যানে উঠে তাদের ( অম্বিকার বাপের বাড়ি) বাড়িতে যেয়ে আম ও বিস্কুট খেয়ে চলে যান। যাওয়ার পথে খায়রুল, বাবু রহমান, মোস্তাফিজুর, লাভলু রহমান, জমিস সরদার, ইমন সরদার, আল আমিনসহ কয়েকজন ইসলামকাটি বলফিল্ডের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে শাহীনুর ও ভ্যান চালককে মারতে মারতে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার একপর্যায়ে তাকে চুলের মুঠো ধরে বারান্দা থেকে মারতে মারতে উঠানে নামানো হয়। সেখানে মারতে মারতে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের কভারের মধ্যে রাখা চার হাজার ৭০০ টাকা কেড়ে নেয়া হয়।

পরে তাকে ঘরের পিছনে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে চলে যায় তারা। বিষয়টি তিনি স্থানীয়ভাবে কয়েকজনকে অবহিত করেন। এ নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ায় তার বাবা ও মাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। এমনকি হামলাকারি মোস্তাফিজুরের কাছ থেকে তার (অম্বিকা) লোকজন পাটকেলঘাটা থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়েছে মর্মে নাটক তৈরি করে। নিরুপায় হয়ে তিনি গত ৭ জুলাই তালা সহকারি পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তালা থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাকে দায়িত্ব দেন। রফিকুল ইসলাম তদন্তের নামে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় হামলাকারিরা আরো উৎসাহিত হয়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ফলে তিনি বাপের বাড়িতে যেতে পারছেন না।

তবে পীযুস পাল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তিনি ১৪ জুন থেকে পহেলা জুলাই পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করেছিলেন। তবে বিশ্বজিৎ সাধুর কাছে খারয়রুলসহ কয়েকজন তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে খায়রুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে তালা থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরদির্শন করে ঘটনার সত্যতা পাননি। বরং অম্বিকা পালের সামাজিক সম্মান নেই দাবি করে তিনি বলেন, তার পক্ষে এলাকার একটি লোক ও সাক্ষী না দেওয়ায় ঘটনার সত্যতার প্রশ্নই ওঠে না। উপরন্তু জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধুর কাছে অম্বিকা পাল ও তার বাবা মোস্তাফিজুরের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া মোবাইল ফেরৎ দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে দাবি করেন।

জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু বলেন, গত ৯ জুলাই সোমবার উভয়পক্ষকে তার অফিসে ডাকা হয়। সেখানে অম্বিকা পালের বিরুদ্ধে ২৯ জুন মোস্তাফিজুরের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হলেও তার সত্যতা মেলেনি। উপরন্ত গোপনে তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে অম্বিকা পালের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষে মীমাংসা করা সম্ভব।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১৬, ২০১৮)