বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি : অমাবশ্যায় অতিবৃষ্টি ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাগেরহাটের পানগুছি, বলেশ্বর, ভৈরব ও দড়াটানা নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বাড়ায় নদীর তীরবর্তী বাগেরহাট সদর ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা এবং ১০টি ইউনিয়নের ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বাগেরহাট-রূপসা পুরাতন সড়কের বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের মুচিঘাট এলাকায় ভৈরব নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। 

ভাঙ্গনের সড়কটির অর্ধেকেও বেশি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশে মারত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। আবার জোয়ারের সময় সড়ক উপচে হু-হু করে পানি লোকালয়ে ঢুকে যাত্রাপুর, ষাটগুম্বজ ও কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ফসলের ক্ষেত, মৎস্য খামার, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সদও উপজেলায় দড়াটানা নদীর জোয়ারে উপচে পড়া পানিতে বিষ্ণুপর, কলাবাড়ীয়া, বেমতাসহ কয়েটি গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে ভেসেগেছে পুকুরসহ শতাধিক মৎস্য খামার। পানগুছি নদীতে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লেিগর সাধারন সম্পাদক এমএ মতিন বলেন, ভাঙ্গনের ভয়াবহতা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সড়ক ও জনপদ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অর্ধেকেও বেশী নদীতে চলে গেছে। আবার সড়কটি উচু কওে নির্মান না করায় জোয়ারের সময় উপচে পড়া পানিতে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। নদী ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বারবার দায়সারা কাজের কারনে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। তিনি দ্রুত টেকসই বাঁধসহ সড়কটি উচু করে নির্মানের দাবী জানান।

বাগেরহাট সদরের বেমতা ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হেসেন টগর জানান, দড়াটানা নদীর জোয়ারে উপচে পড়া পানিতে বিষ্ণুপর, কলাবাড়ীয়া, বেমতাসহ কয়েটি গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে ভেসেগেছে পুকুরসহ শতাধিক চিংড়ি ও সাদা মাছের খামার।

মোরেলগঞ্জ পৌরসভা মেয়র এসএম মনিরুল হক তালুকদার বলেন, মোরেলগঞ্জ সদরে শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় পৌরসভার ১, ২, ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জোয়ারের পানিতে কমপক্ষে ৩শ’ পরিবারে রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। ১নং ওয়ার্ডে পিচ ঢালাই রাস্তা ধ্বসে গেছে, ডুবে গেছে ফেরিঘাট, এসি লাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শেণিকক্ষ ও খেলার মাঠ।

মোড়েলগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী বলেন, গাবতলা ও কাঠালতলা গ্রামের একটি রাস্তা নদীতে গর্ভে চলে যাওয়ায় ৩শ’ ৩০টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ডুবে গেছে গাবতলা কমিউিনিটি ক্লিনিক, গিয়াসিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ। গত ২০ বছর ধরে পানগুছি’র ভাঙ্গনে এ গ্রামের পূর্ব পাড়ার দু’ হাজারেও বেশী ফসলী জমি শত শত পরিবারের বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা খাউলিয়া খালের ওপর সুইজগেট ও বেরিবাঁধের নির্মাণের দাবী জানান।

তেলিগাতী ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার বলেন, এ ইউনিয়নের হেড়মা, মিস্ত্রীডাঙ্গা ও হরগাতী গ্রামের ১৫শ’ পরিবার গত তিন দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছে। ধসে গেছে তেলীগাতি থেকে এতিমূল্ল্যা বাজারের প্রায় এক কিলোমিটার ইটসোলিং রাস্তা।

হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী বদনীভাঙ্গা, পাঠামারা ও সানকিভাঙ্গা গ্রামে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে খাউলিয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া, খাউলিয়া, মধ্যবরিশাল ও সন্ন্যাসী গ্রামে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সদরসহ ৬ ইউনিয়ন ঝুঁকির মধ্যে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী ভেড়িবাঁধ প্রয়োজন।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসরাম বলেন, নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। নদী ভাঙ্গ রেধে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই পাইলিং এর কাজ করা হবে। যেহেতু সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তাই সড়ক সংস্কারের কাজ সড়ক বিভাগই করবে।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, নদী ভাঙ্গনে সড়কটি ধসে নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। জোয়ারের পানি উপচে সড়কসহ জনপদেও সাধারন মানুষ নানা ক্ষতি মুখে পড়ছে। তবে পাউবো নদী শাসনের কাজ শেষ করলে সড়কটি উচু কওে নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে সওজ’র পক্ষ থেকে সড়কটি সচল রাখতে ও ঝুঁকি এড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।

(এসএকে/এসপি/জুলাই ১৭, ২০১৮)