আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলার হুমকিতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেছে সেখানকার হাজার হাজার বাসিন্দা।

রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হুঁশিয়ার করে দিয়ে জানায়, বিমান হামলার পাশাপাশি হামাসের সম্ভাব্য রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করবে তারা। তাই গাজার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের আত্মরক্ষার্থে ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।

এদিকে গাজায়ে ইসরায়েলের টানা ছয়দিনের বিমান হামলায় ১৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং সহস্রাধিক আহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে বেশীরভাগই বেসামরিক নাগরিক। গাজায় এ পর্যন্ত ১২০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল।

অজ্ঞাতনামাদের হাতে তিন ইসরায়েলি কিশোর অপহৃত ও পরে নিহত হওয়ার জন্য হামাসকে দায়ী করছে ইসরায়েল সরকার। পরে সন্দেহভাজনদের ধরতে গাজায় সাঁড়াশি অভিযান চালায় ইসরায়েলি পুলিশ। অভিযানে বেশ কয়েকজন নিহত এবং হামাস যোদ্ধা সন্দেহে শতাধিক বাসিন্দাকে আটক করে তারা।

অন্যদিকে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে পুড়িয়ে মারার পর পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। এরপর গাজা থেকে রকেট হামলা চালানো হচ্ছে এ অভিযোগ করে ফিলিস্তিনে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজায় মূলত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শনিবার রাতে বিমান থেকে ছোড়া ইসরায়েলের প্রচারপত্রের কারণে। ওই প্রচার পত্রে গাজার বাইত লাহিয়া ও পাশের তিন বসতির লোকজনকে রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে বাসস্থান ত্যাগ করতে বলা হয়। এতে আরো বলা হয়, আদেশ না মানলে তাদের জীবন বিপন্ন হবে।

বাইত লাহিয়ায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। ইসরায়েলের ‍হুঁমকির পর অন্তত চার হাজার বাসিন্দা জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া অনেকে নিজেদের যানবাহন যোগে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে চলে যাচ্ছে।

তবে ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বেতার বার্তায় ইসরায়েলের হুমকি নাকচ করে দিয়ে বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়েছে। বার্তায় ইসরায়েলের হুমকি ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধভীতি’ সৃষ্টির জন্য বলে দাবি করা হয়।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার ভোরে গাজায় তিন বছরের একটি মেয়ে মারা যায়। এর কয়েক ঘণ্টা আগে গাজার পুলিশ প্রধানের বাসভবন লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হলে অন্তত ১৮ জন নিহত হয় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এদিকে ইসরায়েল রোববার গাজায় কমান্ডো অভিযান শুরু করেছে । উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি মেরিন কমান্ডোদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়েছে। ছয় দিনব্যাপী বিমান হামলার মধ্যে এটিই সেখানে প্রথম স্থল হামলা। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে সংঘর্ষে তাদের চার সেনা সামান্য আহত হয়েছে। তারা আরো জানিয়েছে, গাজায় স্থল অভিযান চালানোর জন্য ২০ হাজার রিজার্ভ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে।

তবে উপুর্যপরি হামলার পরও গাজা থেকে রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে হামাস যোদ্ধারা। রোববার সকালে দূরপাল্লার একটি রকেট তেলআবিব বিমানবন্দরের কাছে চলে যায়। গাজায় গত ৮ জুলাই থেকে ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে হামাস ৮০০ রকেট হামলা চালায়।

তবে এতে কেউ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে তৈরি আয়রন ডোম প্রযুক্তির সাহায্যে অধিকাংশ রকেট অকার্যকর করে দিয়েছে।

(ওএস/এস/জুলাই ১৪, ২০১৪)