স্টাফ রিপোর্টার : ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ধরতে বিভিন্ন পরিবহণ কোম্পানির ফিটনেসবিহীন বাসগুলোতে চলছে রংচংয়ের কাজ। পুরনো ও পড়ে থাকা বাসগুলোতে রং করে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মহাসড়কে নামানো হবে। এতে একদিকে বাস দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন থাকে, অন্যদিকে দ্বিগুণ ভাড়া নিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না পরিবহণ কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী থেকে সাভার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য পরিবহণের কারখানা রয়েছে। সেখানে পুরাতন ফিটনেসবিহীন ও নষ্ট গাড়িগুলো মেরামত করা হয়। হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহণ, সোহাগ পরিবহণ, গাউছিয়া পরিবহণ, নাবিল পরিবহণ, দ্রুতি পরিবহণ, রোজিনা পরিবহণ, এসআর পরিবহণ, লামাইয়া পরিবহণ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, এসএ পরিবহণ, দেশ ট্রাভেলস ও সুন্দরবন পরিবহণের অসংখ্য পুরাতন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি কারখানাগুলোতে পড়ে আছে। তবে সবচেয়ে বেশি গাড়ি নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে হানিফ ও শ্যামলী পরিবহণের।

সারাবছর যত গাড়ি নষ্ট হয় সেগুলো এই কারখানাগুলোতে ফেলে রাখা হয়। ঈদের মৌসুমে তড়িঘড়ি করে হালকা রংচং করেই রাস্তায় নামানোর ব্যবস্থা করা হয় এসব গাড়ি। ফলে ঈদের সময় হঠাৎ করেই মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি ২/১ দিনও লেগে যায় গন্তব্যে পৌঁছতে। ঈদের ২/১ দিন আগে রওনা হলে কখনো কখনো বাসের মধ্যেই ঈদের নামাজ পড়তে হয়।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর হিসাব মতে, গত ২০১৩ সালে দুই ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের মধ্যে বাস দুর্ঘটনায় সারা দেশে মোট ৪৫৬ জন নিহত হন। আহত হন আরো ১ হাজার ১০০-এর মতো মানুষ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, এ সংখ্যা ৪২৪ জন ও ৮৫০ জনের মতো। আর পুলিশের হিসাব মতে, এ সংখ্যা ৩৭৪ জন ও ৮০০ জন, যা ২০১২ সালের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন গণমাধ্যমকে জানান, কোনোভাবেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকারের বড় বড় নেতাই ওইসব পরিবহণের মালিক অথবা সেগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন। কাজেই সরকারের মন্ত্রীরা যতই চিৎকার করুক না কেন, এর থেকে উত্তরণ হওয়া সহজ নয়। নাগরিক সমাজ এগিয়ে না আসা পর্যন্ত এবং জনগণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ রকম চলতেই থাকবে।
তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কোনো একদিন এর সফলতাও আসবে।’

হানিফ পরিবহনের মার্কেটিং ম্যানেজার আব্দুল আউয়াল সাংবাদিক দেখে প্রথমেই ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘আসেন! বাঁশ দিতে আইছেনতো, আসেন।’ এরপর শান্ত হয়ে বলেন, ‘পুরাতন গাড়ি মেরামতের কাজ নিয়মিত ঘটনা। রাস্তায় গাড়ি চলে, নষ্ট হবে স্বাভাবিক। তাই বলে গাড়িগুলোকে তো ফেলে দেওয়া যাবে না। সেগুলোকে মেরামত করতে হবে। এটা কোনো নিষেধ কাজ না।’

পুরো সময়টাতে নিজের সাফাই গাইলেও শেষে বললেন, ‘দুই-একটা গাড়ি বেশিতো নামাতেই হবে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা যেতে পারে না। গাড়ি বেশি থাকলে যাত্রীদেরও উপকৃত হয়। পাশাপাশি পরিবহণ মালিকরাও একটু টাকা বেশি পায়।’

আব্দুল আউয়াল আরো বলেন, ‘হানিফ এন্টারপ্রাইজের প্রায় ৫ হাজার গাড়ি। এগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বছরের অন্যান্য সময়ে নষ্ট গাড়িগুলো তেমন একটা কাজে লাগে না। তাই ঈদের এ সময়টাতে সেই গাড়িগুলোকে রংচং করে কাজে লাগানো হয়।’

পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি। তবে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এক কর্মকর্তা।

(ওএস/এস/জুলাই ১৪, ২০১৪)