সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : 'তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেব’নেপোলিয়নের সেই স্মরণীয় উক্তিকে সামনে রেখে মা সমাবেশ করেছে সিরাজগঞ্জ রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রম্মগাছা ইউনিয়নের অর্ন্তগত ৭৬ নং কয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি।

বুধবার (১৮ই জুলাই)সকালে অত্র বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর মায়েদের নিয়ে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রছাত্রীর আদর্শ জীবন গড়তে শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের মাঝে মুক্ত আলোচনা হয়। এসময় কয়েকশ শিক্ষার্থীর মা তাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃআব্দুস ছালামের সভাপতিত্বে ও সহকারী শিক্ষক মো. আশরাফুল আলমের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আখতারুজ্জামান। এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসন থেকে বাংলাদেশ আ'লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আবুল কালাম আজাদ হৃদয়।

হৃদয় তার বক্তব্যে মা-সমাবেশের গুরুত্ব ও আদর্শ শিক্ষার্থী হওয়ার ধাপগুলো আলোচনা করেন। তিনি বলেন, শিক্ষিত মা যেমন শিক্ষিত জাতি দিতে পারে তেমনি একটি পারিবারিক শিক্ষালয় একজন মানুষকে আদর্শ শিক্ষা দিতে পারে।

পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নৈতিক শিক্ষা শিশুর পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। একজন শিশু জন্মের পর থেকে কিশোর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পার করে মায়ের সাথে। অতএব আদর্শ শিক্ষার্থী গড়তে মায়েদের ভূমিকা অপরিহার্য।

অসৎ সঙ্গে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ে। লেখাপড়া থেকে ঝরেপড়া রোধে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো, বাড়িতে পড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা, বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকা,মাদকমুক্ত রাখা ও সন্তানদের বিনোদনে রাখার প্রতি মায়েদেরকে আহবান জানান তিনি।

এদিকে মেয়েদের বাল্যবিবাহ থেকে বিরত রাখতে নানা পরামর্শ ও ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরেন। বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক থাকবে বন্ধুর মতো। এতোটা কাছে থাকা উচিৎ যেন সন্তানরা বন্ধুর মতো বাবা মায়ের সাথে সব আলোচনা করতে পারে।

ভ্রান্ত পথে যাওয়ার আগেই যেন বাবা-মা বুঝতে পারে তার গতিপথ। সন্তানদের সব কাজে উগ্র হয়ে বাঁধা না দিয়ে বরং সব কাজে হ্যা বলার পরামর্শ দেন তিনি। প্রথমে হ্যাঁ বলে পরবর্তীতে ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরলে শিশুরা নিজ থেকে ওই কাজ থেকে সড়ে দাড়াবে। ‘চাকরি নেই এই কথার ভিত্তি নেই’ উল্লেখ করে বলেন- দেশে পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ রয়েছে।

বরং কাজ দেয়ার মতো মেধাবীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, পড়ালেখা করলেই চাকরি করতে হবে ঠিক না। পড়া লেখা জ্ঞান অর্জনের জন্য। আর জ্ঞান অর্জন হলে সে যে কোনভাবে উপার্জন করতে পারবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষা দিলেই পাশ এ কথার ভিত্তি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এ ব্যাপারে সজাগ।

এগুলো প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সম্প্রতি পিএসসি,জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার
ফলাফল প্রমাণ করছে সরকার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সন্তানের গতিপথ লক্ষ্য রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অভিভাবকদের যোগাযোগ বাড়ানোরও পরামর্শ দেন।

এধরনের সমাবেশ কয়ড়া মধ্যেপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি বছরেই করে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবং অব্যহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

এসময় অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আলমগীর রেজা গঠনমূলক পরামর্শ তুলে ধরে বলেন, গ্রামীন শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধি, নৈতিক শিক্ষা অর্জনসহ মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার যে পরিকল্পনা করেছে সেটা বাস্তবায়নে মায়েদের ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুদের ঝরে পড়া রোধে সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণ ও উপবৃত্তি দিয়ে আসছে।

তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, শিক্ষার্থীর পড়ার মান বজায় রাখতে প্রতি নিয়ত হোম ভিজিট, মোবাইল কমোনিকেশন, রাতে পড়ার টেবিলে শিক্ষার্থীরা আছে কিনা সেজন্য রাতেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শন করে থাকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

তিনি আরো বলেন, পাঠ্য বই ও সার্টিফিকেট নির্ভর পড়ালেখা ভাবনা ছেড়ে সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত হবে হবে।

(এমএএম/এসপি/জুলাই ১৮, ২০১৮)