জোটন চন্দ্র ঘোষ, হালুয়াঘাট : হালুয়াঘাটে বোরো ফসলের কেটে নেয়া ধান গাছের মুড়ি (স্থানীয় ভাষায় নাড়া) থেকে ধান ফলনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চমক সৃষ্টি করে চলেছেন ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার পশ্চিম কড়ইতলী গ্রামের কৃষকগণ। এই পদ্ধতিতে ধান আবাদ করে লাভবান হয়েছেন আশপাশের গ্রামের কৃষকরাও।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ উপজেলায় গাজিরভিটা, জুগলী, ভূবনকুড়া ও হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে মুড়ি ধানের আবাদ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চাষিরা ইরি বোরো কাটার পর পড়ে থাকা ধান গাছের নাড়া থেকে পদ্ধতিতে পুনরায় কৃষকরা মুড়ি থেকে ধান চাষে উৎসাহী ও এই ধান চাষ করে ব্যাপক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। মুড়ি থেকেও যে ধান চাষ হয় এতোদিন সাধারণ কৃষকের মধ্যে সেই ধারনা ছিল না। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবার তারা এই ধান চাষ করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। কোনো প্রকার সেচ ও সার প্রয়োগ ছাড়াই শুধুমাত্র কয়েকবার কীটনাশক স্প্রে করেই তারা মুড়ি থেকে ধান উৎপাদন করছেন। ফলে এসব ধান চাষ এলাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলার পশ্চিম গোবরাকুড়া গ্রামের কৃষক ইসহাক মিয়া জানান, বোরো মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে বি আর-২৯ ধান চাষ করেন। ধানের ফলন হয় প্রায় ২০ মণ। আশানূরূপ ফলন না হওয়ায় জমিতে পড়ে থাকা ধানগাছের গোড়া নষ্ট না করে পুনরায় ধান উৎপাদন করতে যতœ নেন তিনি। গত বছর তিনি একই পদ্ধতিতে কোনো প্রকার সেচ ছাড়াই শুধু সামান্য পরিমাণে সার প্রয়োগ আর কয়েকবার কীটনাশক স্প্রে করে চাষকৃত এসব মুড়ি ধান থেকে তুলানামূলক ভালো ফলন পেয়েছেন।

স্থানীয় বর্ঘাচাষী কিতাব আলী জানান, আবাদী ২৫ কাঠা জমিতে দু’দিন আগে তিনি পুনরায় কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করেছেন। ধানের সতেজতার জন্যে পরিমাণে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে কমপক্ষে ২৫-৩০ মণ ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা ব্যাক্ত করেন।

একই গ্রামের কৃষক আঃ রাজ্জাক বলেন, এক সময় ধানের গোড়া কেটে গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কাটা ধানের গাছের গোড়া থেকে ফসল উৎপাদনে আশা জাগিয়েছে।

মুড়ি থেকে ধান চাষ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ জানান, ধানের মুড়ি থেকে আবার ধান চাষ করা যায়। ধান কাটার পর একটু যতœ নিতে পারলেই তুলানামূলক ফলন পাওয়া সম্ভব। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কৃষক মুড়ি থেকে ধান চাষ করছেন বলে জানান।

(জেসিজি/এসপি/জুলাই ১৮, ২০১৮)