নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা ছাড়া কোন ফাইলেই স্বাক্ষর করেন না তিনি। তিনি দম্ভোক্তির সাথে বলেন যে আমার স্বাক্ষর নিতে হলে আমাকে বরাদ্ধকৃত অর্থের ১০% কমিশন দিতে হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম, শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ, কাজ না করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

এ ব্যাপারে শিক্ষকেরা উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের নিকট দফায় দফায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। মোসা তাজমুন্নাহার ২০১৭ সালের ১৫ মে নগরকান্দা উপজেলা শিক্ষা অফিসার চলতি দায়িত্ব হিসেবে যোগদান করেন।

অভিযোগ থেকে জানাগেছে, যোগদানের পর থেকেই সে বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন। সরকারী পরিপত্রের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, এখানে আমার পরিপত্র চলবে। আমি যা বলবো সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে। কোন শিক্ষক অবাধ্য হলে তাকে শোকজের একটি কাগজ ধরিয়ে দেন।

উপজেলার ৮৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৭ টি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের আওতায় ৭ টি প্রকল্পে প্রতিটিতে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা করে বরাদ্ধ হয়। উক্ত প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই শিক্ষা কর্মকর্তার দাবীকৃত ১০% কমিশন দিতে হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে টাকা নেওয়ার আগে প্রত্যেক প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে স্বাক্ষরিত প্রত্যায়ন নিয়েছেন যে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কোন টাকা প্রদান করি নাই।

এ ছাড়াও ৮৩ টি বিদ্যালয়ে স্লিপ কমিটি প্রকল্পে বরাদ্ধের বিদ্যালয় প্রতি ৪০ হাজার টাকা উত্তোলনে স্বাক্ষর নিতে শিক্ষা অফিসারকে দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে।

রুটিন মেরামত নামে প্রকল্পে ২৮ টি বিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা উত্তোলনে তাকে দিতে হয়েছে ১ হাজার টাকা।

২৮ টি বিদ্যালয়ের টয়লেট মেরামত বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয়ে ২০ হাজার টাকা উত্তোলনে প্রত্যেকের নিকট থেকে ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

এ ছাড়াও শিক্ষকেরা আরো অভিযোগ করে বলেন, ২৭ জন প্রধান শিক্ষকের বকেয়া টাইম স্কেলের টাকা উত্তোলন করতে প্রত্যেকের নিকট থেকে ৭ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

শিক্ষকদের বরাদ্ধকৃত টি এ বিলের প্রায় ৪ লাখ টাকা শিক্ষকদের না দিয়ে নিজ একাউন্টে জমা করে তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় অনেক বিদ্যালয়ের সংযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ। অথচ বিদ্যুৎ বিলের বরাদ্ধকৃত অর্থ নিজ একাউন্টে রেখে তা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছেন।

ইন্টারনেট খরচ বাবদ স্কুল প্রতি ৪ শত টাকা করে বরাদ্ধ থাকলেও কাউকে কোন টাকা না দিয়ে পুরো টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছে বলে জানাগেছে।

এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের তথ্য অনলাইনে আপলোড করতে প্রধান শিক্ষক প্রতি ৫শত, সহকারী শিক্ষক প্রতি ৪শত ও বিদ্যালয় প্রতি ৬শত টাকা করে আদায় করা হয়েছে। যাহা আপলোড করতে খরচ হয় মাত্র ১২/১৫ টাকা।

১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওয়াশ ব্লক নামে উন্নত টয়লেট নির্মানে ঠিকাদারের নিকট ১০% টাকা দাবী করে। ঠিকাদার ৫% দিলে তার ফাইলে স্বাক্ষর না করে টাল বাহানা করতে থাকে। পরে বাকী ৫% পরিশোধ করে তার ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।

শিক্ষকদের অভিযোগে আরো জানা গেছে ৩/৪ জন শিক্ষকের সাথে তার রয়েছে সু সম্পর্ক। এ সুবাদে ঐ শিক্ষকদের মাধ্যমে তিনি এই অর্থ আদায় করে থাকেন।

এ ছাড়াও শিক্ষা কর্মকর্তাকে দক্ষিনা না দেওয়ায় ৫১ টি বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ্য প্রহরীর ৪ মাস যাবৎ বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে নৈশ্য প্রহরীরা উপজেণা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেছেন।

সম্প্রতি উপজেলায় ২৪ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তার চাহিদা মাফিক টাকা না দেওয়ায় তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তাদের নামে একটি করে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে শোকজের চিঠি হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তাজমুন্নাহারের সাথে কথা বলতে তার দপ্তরে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠো ফোনে বার বার চেষ্টা করলেও সে ফোন রিসিভ করেননি।

ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিবু পদ দে বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বদরুদ্দোজা শুভ বলেন, শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। আমি নিজে অভিযোগের তদন্ত করছি। প্রমান পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এনএস/এসপি/জুলাই ১৯, ২০১৮)