ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে এবার বিস্তর ঘুষ লেনদেনের ভিডিও নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে উপজেলা জুড়ে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষকদের মাঝে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সদ্য জাতীয়করণ শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন। ১ম, ২য় ও ৩য় ধাপের শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি বকেয়া বিল করে দিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। রেজাউলের ঘুষের ভিডিও করেন একজন শিক্ষিকার স্বামী। এরপর বিষয়টি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ৩য় ধাপে জাতীয়করণ করা হয় উপজেলার চাঁদপুর জোয়ার্দ্দার পাড়া রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। বকেয়া বিল করার জন্য শিক্ষকদের কাছে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। প্রথম দফায় রেজাউল প্রায় লাখ টাকা নেয় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে। এরপর আরো দাবি করা হয়। এরপর ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লতিফার স্বামী মিজানুর রহমান আরো কয়েক হাজার টাকা দেন রেজাউলকে। মিজানুর টাকা দেয়ার বিষয়টি কৌশলে ভিডিও করেন। ভিডিওটি মুছে ফেলার জন্য তার পছন্দের শিক্ষক দিয়ে মিজানুরকে হুমকি দেন রেজাউল।

রেজাউলের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে। হরিণাকুন্ডুর শিক্ষক সমাজ এই কর্মচারীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়লেও হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেই চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেন তিনি। জানা গেছে, হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ৫ বছর আগে যোগদান করেন রেজাউল।

যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে একাধিকবার আলোচনায় উঠে আসেন। শিক্ষকদের বকেয়া বিল, টাইম স্কেল, বদলী বাণিজ্য, শ্রান্তি বিনোদন, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ শিক্ষা দপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ সম্পাদন করার সুযোগ নেই রেজাউলের দাপটে। এছাড়া হরিণাকুন্ডু উপজেলার ১৩৫টি (সদ্য জাতীয়করণ) বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে রেজাউলের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। উৎকোচ নিয়ে তিনি ডিপিএড প্রশিক্ষণে থাকা শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণে প্রেরণ করে থাকেন। ১ম ধাপে ৭৮টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ৩৯০ জন শিক্ষক জাতীয়করণ হয়।

এরপর ২য় ধাপে ৫টি বিদ্যালয়ের ২০ জন এবং ৩য় ধাপে ১টি বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষককে জাতীয়করণ করা হয়। বকেয়া বিল করার জন্য এসব শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়েছেন বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। কিন্তু ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত অসহায় শিক্ষকগন বিভিন্ন ধরনের হুমকি এবং হয়রানির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ঘুষের টাকায় নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন রেজাউল। তাকে বখরা না দিলে শিক্ষকদের কোন কাজেই হাত দেন না। ৩ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের বদলীর বিধান থাকলেও ঘুষ, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়ম করার কারণে তিনি হরিণাকুন্ডু ছাড়েন না। ৫ বছরে তিনি অন্তত ৩ থেকে ৪ বার বদলীর আদেশপ্রাপ্ত হলেও শেষপর্যন্ত হরিণাকুন্ডুতে থেকে যাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে রেজাউলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শিক্ষকদের লাখ লাখ টাকার বকেয়া বিল করে দিয়েছি। শিক্ষকরা খুশি হয়ে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন, এটা ঘুষ বলা যাবে না। টাকা দিয়ে আবার ভিডিও করা এটা অন্যায়।

তবে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। বলেন, অফিসারদের বিষয়ে আমার কোন হাত থাকে না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুর রহমান বলেন, ওই কর্মচারীর ব্যক্তিগত ঘুষের দায়ভার অফিস নেবে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রেজাউলের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেবে আমি তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব।

এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

(জেআরটি/এসপি/জুলাই ১৯, ২০১৮)