কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় বাড়ছে কৃষি জমিতে আগাছানাশকের ব্যবহার। সম্প্রতি শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়া ও শ্রমিকের অভাবের কারণে কৃষকরা আগাছানাশক ব্যবহারে ঝুঁকছে। জমি প্রস্তুতে আগাছাদমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

ইতিপূর্বে দেখা গেছে আগাছা দমন করে সেগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে চাষ করে দেওয়া হতো। যার ফলে ফসলের জমির উর্বরতা ও অনুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতো। তবে আগাছা দমনে অতিরিক্ত কিটনাশক ব্যবহারের ফলে আগাছাকে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সময় ও খরচ কমার সাথে সাথে মাটির ভৌত গুনাগুন কমছে। পরিবেশে পড়ছে হুমকির মুখে। মাটিতে অনুজীবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এছাড়া আসন্ন কোরবানী উপলক্ষ্যে পারিবারিকভাবে যে সকল খামারী রয়েছে তারাও পড়েছে বিপাকে। মাঠে গবাদীপুশুর কাচা ঘাষ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গো-চরন ভুমিও।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, আমি আমার এক বিঘা জমিতে ফসল উঠে যাওয়ার পরে অতিরিক্ত আগাছা থাকায় বিষ দিয়ে ঘাস পুড়িয়ে দিয়েছি। এর ফলে আমার আগাছাও দমন হয়েছে আবার খরচ ও কম হয়েছে। এক বিঘা জমির আগাছা দমন করতে হলে ১৫ থেকে ২০ টা শ্রমিক লাগতো। সেখানে ১৮০ টাকার বিষ দিলেই আগাছা পুড়ে হয়ে যাচ্ছে। এছড়া সকালে বিষ দিলে বিকেলেই মরে যাচ্ছে। সময় কম লাগছে।

আরেকজন কৃষক ঝুমুর আলী জানান, আমার জমিতে ধান কাটার পরে প্রচুর পরিমানে আগাছা জন্মায়। আমি প্যারট নামের একটি বিষ প্রয়োগ করে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জমির সব আগাছা মরে ভুত হয়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, শ্রমিক দিয়ে ঘাস মাটিতে পুতে দিলে মাটির উর্বরতা বাড়তো তবে খরচ বেশি হয়।
উক্ত এলাকার আরেকজন সচেতন ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম জানান, ফসল কাটার পরে যে জমিতে গরু-মহিষ ঘাষ খেতো সেখানে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যার ফলে গো-খাদ্য কমে যাচ্ছে। এছাড়া পাখিরা পোকামাকড় ও পাচ্ছে না। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, কৃষক সময় ও টাকা বাঁচানোর জন্য আগাছা দমনে অতিরিক্ত মাত্রায় আগাছানাশক ব্যবহার করছে। এর ফলে মাটিতে অনুজীবের সংখ্যা কমে যায়। যা মাটির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফসলের কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায় না। এটি প্রাকৃতিক খাদ্য শৃংখল নষ্ট করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এছাড়া কৃষি জমির আগাছা পশুখাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে এবং জমির জৈব পদার্থ আবর্তনে ব্যবহৃত হতে পারে।

তিনি আরো জানান, কৃষি জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে রাসায়নিক ব্যবহার না করায় উত্তম।

(কেকে/এসপি/জুলাই ২১, ২০১৮)