জামালপুর প্রতিনিধি : প্রায় ৮০ কোটি টাকা লোকসান ও ১৫ কোটি টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ হলো সরিষাবাড়ীর আলহাজ জুট মিল। শুক্রবার মধ্যরাতে মিলটি বন্ধের ঘোষনা করে নোটিশ টানিয়ে দেয় মিল কর্তৃপক্ষ। বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকরা শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করছে। মিল বন্ধ ঘিরে দেখা দিয়েছে শ্রমিক অসন্তোষ । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মিল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

আলহাজ জুট মিলের নিরাপত্তা প্রধান সিরাজুল ইসলাম জানান, আলহাজ জুটমিলের হেড অফিস থেকে পিয়ন দেলোয়ার শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে এসে আলহাজ জুট মিলের প্রধান গেটে মিলটি বন্ধের নোটিশ লাগিয়ে দিয়ে চলে যান। শনিবার সকাল ৬টায় তিনি ডিউটিতে এসে মিল বন্ধের নোটিশ দেখতে পান। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় শত শত শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

মিল সুত্র জানায়, ১৯৬৭ সালে সরিষাবাড়ী পৌরসভার মাইজবাড়ি এলাকায় আলহাজ জুট মিলটি স্থাপিত হয়। এ মিলে পাটের তৈরি বস্তা, ব্যাগ ও কার্পেটের সুতা প্রস্তুত করা হয়। দৈনিক প্রায় ১৫ মে. টন পণ্য উৎপাদন হতো। বর্তমানে এখানে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মিলটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাতেই কর্মকর্তারা মিল ছেড়ে গা-ঢাকা দেন।

এদিকে মিল বন্ধের প্রতিবাদে হাজারো শ্রমিক সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে মিলগেটে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আলহাজ জুট মিল সিবিএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুলহাস উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমানসহ সিবিএ নেতারা।

বক্তব্যে সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মিলটি বন্ধ করেছে। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের এখনো মিলের কাছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া পরিশোধসহ সুষ্ঠু সমাধান না হলে বৃহত্তর শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

পাট ব্যবসায়ী আব্দুল বারিক এ প্রতিবেদকে বলেন, মিল কর্তৃপক্ষের কাছে পাট ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তাঁর নিজেরই প্রায় ২৫ লাখ টাকা পাওনা। হঠাৎ মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম পাট ব্যবসায়ীদের।

এ ব্যাপারে আলহাজ জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলহাজ হারুনুর রশিদ মুঠোফোনে জানান, মিলটি বর্তমানে প্রায় ৮০ কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে। লোকসান প্রতিমাসে বেড়ে চলায় মিল চালু রাখা সম্ভব না। তবে বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে বলে আশ্বোস দেন তিনি।

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন নজরে রাখছে।

(আরআর/এসপি/জুলাই ২১, ২০১৮)