রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্টার ডা. মনিরা আফরোজের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে।

মনিরা আফরোজ যদি আমার বাবাকে সাপে কাটার ভ্যাকসিন দিতো তাহলে আমার বাবা প্রাণে বেচে যেতো। আমরাও ভাই বোনের কেউ এতিম হতাম না। সাপে কাটার ভ্যাকসিনের লিফলেট আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরা বিতরণ করে থাকি। তার পরেও আমার বাবাকে সাপে কাটার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করে দিতে পারলাম না।

আমি ডা. মনিরা আফরোজের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি। যাতে করে দায়িত্ব অবহেলার কারণে আর কোন সন্তানকে এতিম না হতে হয়। এমন কথা বলছিলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার চর ভাবলা গ্রামের মৃত আবু সাইদের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম শান্ত। তিনি শনিবার সকালের ডা. মনিরা আফরোজের দায়িত্ব অবহেলার কারণে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন মো. শহিদুল ইসলাম শান্ত। লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই সোমবার দুপুর দেড়টায় নিজ বাড়ী পাশে দোকানে অবস্থানরত অবস্থায় তার বাবা আবু সাইদ (৬০) কে বিষাক্ত সাপে কাটে। পরে দুপুর ২.২৫ মিনিটে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ডা. মনিরা আফরোজের অধীনে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির সময় আবু সাইদের দুই পায়ের বাঁধন খুলে দেয় ও হাসপাতালে সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই বলে জানান ডা. মনিরা আফরোজ।

ডাক্তার জানিয়েছিলেন সাপে কাটার লক্ষন হচ্ছে চোখে ঝাপসা দেখা, বমি হওয়া ও চোখের পাতা নেমে আসা। ভর্তি করানোর ১৫ মিনিট পরে সাপে কাটার লক্ষণ গুলো দেখা দেয় আবু সাইদের দেহে। বিষয়টি ডা. মনিরা আফরোজকে অবগত করলে তখনও তিনি জানান সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই। বিষয়টি টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরিফ হোসেন খানকে অবগত করলে তিনি সাপে কাটার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। সিভিল সার্জন ডা. মনিরা আফরোজকে মোবাইল ফোনে বলেছিলেন শহিদুল ইসলাম তার স্টাফ উনার বাবাকে দ্রুত সাপে কাটার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

মনিরা আফরোজ ওই সময় বলেছিলেন, সিএস বললেই ভ্যাকসিন দিতে হবে। মো. শহিদুল ইসলাম শান্তকে হাসপাতালের ম্যানেজ ম্যান্টের সাথে কথা বলতে বলেন ডা. মনিরা আফরোজ। তার পর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. সদর উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন শহিদুল ইসলাম শান্ত। সদর উদ্দিনের সাথে হাসপাতালের আরএমও’র সাথে কথা হয়েছে বলে জানায়। কিন্তু এন্টি ¯েœক ভেনম ভ্যাকসিন দিতে পারবে না বলে জানান সদর উদ্দিন। বিকেল ৫টার দিকে আবু সাইদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা ময়মনসিংহ হাসপতালে নেওয়ার জন্য বলেন সদর উদ্দিন। অবস্থার অবনতি হলে আবু সাইদকে নিয়ে ময়মনসিংহ হাসপাতালে যায় মো. শহিদুল ইসলাম শান্ত। ময়মনসিংহ হাসপাতালে সন্ধ্যা ৭.৪৫ মিনিটে ভর্তি করানো হয়। পরে ৮.১৫ মিনিটে মৃত্যু বরণ করেন আবু সাইদ।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্টার ডা. মনিরা আফরোজের মোবাইলে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত আবু সাইদের বড় ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম শান্ত, ছোট ছেলে মো. সোহেল রানা, মেয়ে শান্তা ইসলাম, টাঙ্গাইল স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।

(আরকেপি/এসপি/জুলাই ২১, ২০১৮)