স্টাফ রিপোর্টার : মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত।

ফলে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিলের বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন চেম্বারজজ আদালত।

আগামী ৮ অক্টোবর বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বাসমালিক কর্তৃপক্ষের করা আপিল আবেদনের শুনানি রবিবার আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বারজজ আদালতে অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে বাসমালিকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। নিহত তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন। রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী।

২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের ওই সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে তারেক মাসুদের পরিবারকে চার কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। এর মধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিক দেবেন চার কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫২ টাকা, বাসচালক জমির উদ্দিন দেবেন ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দেবে ৮০ হাজার টাকা। তিন মালিক সমান হারে টাকা দেবেন।

ওই টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, নিহতের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায়টি দেন।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মিশুক মনির। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী ‘চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স’ পরিবহনের একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হন। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। পরবর্তীতে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা। নিম্ন আদালত থেকে মামলা দুটি স্থানান্তরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে ওই আবেদন দুটি করা হয়। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং মিশুক মনিরের স্ত্রী কানিজ এফ কাজী ও তাদের ছেলে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর হাইকোর্টে ওই দুটি আবেদন করেন। যার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন।

রুলে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি কেন উচ্চ আদালতে বদলি করা হবে না— তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি মামলা দুটির নথি তলব করা হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা ও মোটর ক্লেইমস ট্রাইব্যুনালে করা মামলা দুটি হাইকোর্টে বদলির আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে বিচারপতি জিনাত আরার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি।

এদিকে, হাইকোর্টের একই বেঞ্চ নিহত বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীরের জন্য ক্ষতিপূরণ মামলা চলছে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৮)