স্টাফ রিপোর্টার : চিরবিদায়ের বেলায় শেষবারের মতো প্রিয়ছাত্র রাজীব মীরকে দেখতে আসতে ভুলেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। টিএসসিতে রাজীবের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রাজীবের মুখখানা দেখে চোখ ভিজিয়েছেন। অশ্রুসিক্ত নয়নে রাজীবকে বিদায় জানিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

রবিবার বিকেলে প্রথম জানাজা শেষে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাজীবের মরদেহ আনা হয় টিএসসিতে। সেখানে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কফিনে থাকা রাজীবের মুখটি শেষবারের মতো দেখতে অনেকে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে এসেছেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, রাজীব মীর একজন মেধাবী ছাত্র এবং একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষক ছিল। তার আচরণ ছিল বন্ধুসুলভ, সব সময় হাসিমুখে কথা বলত। সর্বশেষ যখন তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে দেখতে যাই তখন সে হাসিমুখে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ‘স্যার কেমন আছেন?’ সেটাই ছিল আমার সঙ্গে তার শেষ কথা। রাজীবের অনেক স্বপ্ন ছিল, রাজীব একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখত। আমাদের দায়িত্ব রাজীবের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা।

এ সময় রাজীবের বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শেখ আব্দুস সালাম বলেন, রাজীবের মতো এমন একজন প্রাণবন্ত মানুষ প্রাণহীন অবস্থায় শুয়ে আছে এটা কখনোই ভাবতে পারিনি। আমাদের দায়িত্ব রাজীবের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ্ তাকে জান্নাত দান করুন।

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব ও রাজীবের সহপাঠী আশরাফুল আলম খোকন বলেন, রাজীব আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি। সর্বশেষ যখন দিল্লি যাই তখন রাজীবের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। সে আমার কাছে দোয়া চেয়েছিল। রাজীবের চিকিৎসার জন্য আমার যেসব বন্ধু ও স্যাররা সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, রাজীব মিডিয়ায় এবং মিডিয়ার বাইরে সবসময় ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতেন। আপনারা তার বিষয়ে অনেক কথা শুনেছেন। আমি সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, এগুলো সব সাজানো। রাজীবের কোনো দোষ ছিল না, একমাত্র দোষ ছিল সে ছাত্রদের পক্ষ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে কথা বলেছে।

এর আগে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে ঢাবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার সকাল ৯টায় রাজীবের নিজ গ্রাম ভোলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে দ্বিতীয় এবং নিজ এলাকা পরাণগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় জানাজা।

বেশ কয়েক মাস ধরে লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন রাজীব। চলতি সপ্তাহে রাজীব মীরের অপারেশন ও লিভার পরিবর্তনের কথা ছিল। তবে সবাইকে কাঁদিয়ে শুক্রবার রাত ১টা ৩৭ মিনিটে ভারতের চেন্নাইয়ের গ্লোবাল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রোববার ভোরে একটি ফ্লাইটে দেশে আনা হয় তার মরদেহ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করেন রাজীব মীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করা রাজীব কবিতা লেখা ছাড়াও নিয়মিত লেখালেখি করতেন। সমাজকর্মী ও গবেষক হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৮)