হুমায়ুন মিয়া

গালিয়ার্দই। বিশ্ববিখ্যাত বীর। সারাপৃথিবীকে পদানত করার স্বপ্ন শিখেছিল খুব ছোটবেলা থেকেই। নিজকে তৈরিও করেছিল সেভাবেই। দেশের পর দেশ জয় করে, ধ্বংসলীলা চালিয়ে, মানুষ হত্যা করে গালিয়ার্দই ভীষন মজা পেত,রক্তে ছিল তার খুনের নেশা।কিন্ত রাতে দু'চোখের পাতা সে এক করতে পারত না,ঘুম হতো না।

গালিয়ার্দইর মা'কে সবাই বলত খুনির মা,বেঈমানের মা। রনক্লান্ত সেই বীর বহুদিন পরে একদিন এল মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। বলল, "মা,আমি তোমার কাছে একটু ঘুমাতে এসেছি,তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শোব আমি!" মায়ের কোলে মাথা গুঁজে দিল গালিয়ার্দই। মা তার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে শোনাতে লাগল সেই ছোটবেলার মতো ঘুমপাড়ানি গান। গভীর ঘুমের দেশে পাড়ি দিল গালিয়ার্দই। তার মা এবার কাপড়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখা একটি ছুরি বের করে হত্যা করল তার সেই খুনি পুত্রকে। চিরদিনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিল পুত্র গালিয়ার্দাইকে। কিন্ত তার পর থেকে সেই মা তার দু'চোখের পাতা আর কোন দিনই বন্ধ করতে পারেনি,ঘুমাতে পারেনি। বিনিদ্র রজনী তাকে কাটাতে হয়েছে আমৃত্যু। কারন খুনিরা কখনো ঘুমাতে পারে না।

আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে ২০০৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রক্তের নেশায় খুনিরা সাহেব মিঞা'র দেহ ক্ষত বিক্ষত করে, খুন নিশ্চিত করে তাঁর স্ত্রী পারুলী বেগমকে বিধবা করেছে, তার সন্তানদের পিতৃহারা করেছে।

খুনিরা কখনো ঘুমাতে পারে না। অথচ ১৫ বছর পূর্বে খুনিরা সাহেব মিঞাকে খুন করে "একদিন বেরিয়ে আসবে " নিশ্চিত থেকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে,কেবল নির্ঘুম থেকেছে সাহেব মিঞার স্ত্রী - সন্তানেরা। কেবল তাই নয়, অভিযুক্ত খুনিরা রাস্ট্রপতির ক্ষমায় বের হয়ে এসে স্বামীহারা স্ত্রী,পিতৃহারা সন্তানদের সামনে আস্ফালন করেছে,আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের উপস্থিতিতে খুন হওয়া সাহেব মিঞার বাড়ীর সামনেই জনসভা করে এই আস্ফালন হয়েছে। অথচ জনসভার দিনেই মানুষের আহাজারী ছিল "হে আল্লাহ তুমি কোথায় ? "

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে খুনিরা আস্ফালন করেছে। বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ হাসিনা খুনিদের বিরূদ্ধে, আস্ফালনকারীদের বিরূদ্ধে ২১ বছর রাজপথে থেকে বিচার চেয়েছে, বিচার করে তাঁর ঘুম নিশ্চিত করেছে।

কিন্ত সাহেব মিঞা খুনের আস্ফালনকারীদের উপর এমন কি কোন গজব নাজিল হবে, যা দেখে খুন হওয়া সাহেব মিঞা'র স্ত্রী- সন্তানেরা শান্তিতে ঘুমাতে পারে ? আমরা সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম - হে আল্লাহ তুমি সব দেখ,সব জান ।