শরীয়তপুর প্রতিনিধি : দৈনিক যায়যায়দিন, চ্যানেল ২৪ টেলিভিশ ও উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রকাশ্যে গুলি করে ও গলা কেটে হত্যা করার হুমকি দেয়ায় শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরীটি দায়ের করা হয়।

জানা গেছে, দীর্ঘ দিন যাবৎ সরকারের সামাজিক বিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প ও গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষনা বেক্ষন টি,আর, কাবিখা, কািবটা ও জি,আর প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি করে আসছেন ইউএনও জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব প্রকল্প বলে খ্যাত “ ভিটা আছে ঘর নেই” এমন হতদরিদ্র লোকদের গৃহ নির্মান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৫ শত জন দরিদ্র লোককে গৃহ নির্মান করে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়ম-নীতি লংঘন করা হচ্ছে মর্মে তথ্য পেয়ে সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম ও তার সহকর্মীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শণ করেন। এ সময় প্রকল্পের প্রত্যক্ষ উপকারভোগি ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে অনিয়ম হওয়ার বিষয়ে ব্যাপক প্রমান পাওয়া যায়। এতে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথাও জানা যায়। ইউএনও কর্তৃক সম্পাদিত অনিয়ম বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে জানতে পেরে ইউএনও জিয়াউর রহমান সাংবাদিক কাজী নজরুলের প্রতি ক্ষীপ্ত হয়ে তার সহকর্মীদের মারফত নানা ধরনের গালিগালাজ সহ তাকে জীবন নাশেরও হুমকি দিতে থাকেন।

গত ২০ জুলাই শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার সময় ইউএনও জিয়াউর রহমান শরীয়তপুর সদর উপজেলা চত্বরে চলমান বৃক্ষ মেলার একটি স্টলে বসে ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি বি,এম ইশ্রাফিলকে ডেকে নিয়ে তার কাছে অযাচিত ভাষায় উচ্চ স্বরে নজরুলকে গালিগালাজ করেন এবং তাকে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন। এরপর ২১ জুলাই দুপুর দেড়টার (১:৩০ মি:) সময় শরীয়তপুর জেলা শহরের দুবাই প্লাজায় অবস্থিত চিকন্দী ফুড পার্কে একটি জনাকীর্ণ পরিবেশে বি,এম ইশ্রাফিলের কাছে পূনরায় উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে কাজী নজরুলকে গালিগালাজ করতে থাকেন ইউএনও জিয়াউর রহমান।

এক পর্যায়ে তিনি বি,এম ইশ্রাফিলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সাংবাদিক নজরুলকে আমি গুলি করে মেরে ফেলবো। ওর মত সাংবাদিককে মেরে ফেললে কিছুই যায় আসে না। আমার নাম জিয়াউর রহমান। আমি যা বলি তা করে দেখাই। ওকে আমার অফিসে নিয়ে হাত পা বেধে অফিস থেকে লাথি লাথি মারতে মারেত নিচে ফেলে দিব ইত্যাদি”। এছারাও তিনি নজরুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদা বাজির মামলা করার হুমকি দেন।

সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আমাকে প্রকাশ্যে জীবন নাশের হুমকি দেয়ার বিষয়টি ২১ জুলাই রাত ১০ টার দিকে বি,এম ইশ্রাফিলের কাছ থেকে জানতে পারি। এরপর আমি ইউএনও জিয়াউর রহমানকে রাত ১০ টা ৪৪ মিনিটে মুঠোফোনে ফোন করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে, তিনি আমার পরিচয় জানতে পেরেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং আমাকে এই বলে হুমকি দেন যে, “ আপনি তো আমাকে চিনেননা, আমার অফিসে আসেন আপনাকে দেখিয়ে দিব আমি কে, আমাকে আর ফোন করলে আপনার গলা কেটে ফেলবো, আপনি একজন অকৃজ্ঞ, আপনি সাংবাদিক নামের কলংক, আপনি দুই টাকার সাংবাদিক, আপনি আমার বালের সাংবাদিক, ইত্যাদি”।

বিষয়টি আমি শরীয়তপুরের সুযোগ্য পুলিশ সুপার মহোদয়কে সহ আমার সহকর্মী ও অফিসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। সকলের পরামর্শ মতে সোমবার বিকেলে পালং মডেল থানায় আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ও ইউএনও জিয়াউর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিসি নিউজ টেলিভিশনের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের শরীয়তপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক বি,এম ইশ্রাফিল বলেন, পর পর দুইদিন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউর রহমান প্রকাশ্য জনসমুখ্যে আমাকে ডেকে নিয়ে আমাদের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলামকে জীবন নাশের হুমকি দিয়েছেন। তাকে মামলায় জরানোর কথা বলেছেন। তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেধে পেটাতে পেটাতে নিচে নামিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নজরুলকে আমি গুলি করে মেরে ফেলবো। ওর মত সাংবাদিক মেরে ফেললে আমার কিছুই হবেনা। আমার নাম জিয়াউর রহমান। আমাকে সে চিনেনা। আমি যা বলি তা আমি করে দেখাই। আপনি ওকে বলবেন, আমি ওকে গুলি করে মেরে ফেলবো।

(কেএনআই/এসপি/জুলাই ২৩, ২০১৮)