সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : গভীর নলকূপের সেচ প্রকল্পের আওতায় একটি অগভীর নলকূপের সংযোগের দাবীতে বিদ্যুৎ সংযোগের খুঁটি স্থাপনের কাজে ঠিকাদারকে দুদফায় বাঁধা প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে ৬ মাস ধরে খুঁটি স্থাপনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের ছয়দুন (তবিয়ারগাতী) গ্রামে। গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া জানান, খুঁটি স্থাপনের কাজে বাঁধা প্রদান করায় গভীর নলকূপের আওতায় সেচ প্রকল্পটিতে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া অনিশ্চয়তার মুখে পরেছে। এছাড়া ৮৮ পরিবারেও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

বিগত ১৯৮৮ সনে ছয়দুন (তবিয়ারগাতী) গ্রামের কৃষকদের জমিতে সেচ দিতে বি.আর.ডি.বির মাধ্যমে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। ডিজেলের মাধ্যমে কয়েক বছর সেচ দিয়ে জমি আবাদও করা হয়। কৃষক সমবায় সমিতির বর্তমান ম্যানেজার মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল হামিদের ছেলে শেখ আব্দুল জব্বার জানু জানান, ডিজেলে গভীর নলকূপ চালিয়ে সেচ দেয়ার খরচ অনেক বেশি।

আমরা “শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এই শ্লোগানের আলোকে সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ (মটার) ও গ্রামের ৮৮টি পরিবারে সংযোগ দিতে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার বরাবর গত বছর আবেদন করি। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে খুঁটি স্থাপন ও বিদ্যুতের সংযোগ দিতে ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহবান করেন। ঠিকাদার নিয়োগের পর ছয়দুন (তবিয়ারগাতী) সেচ প্রকল্প এলাকায় ৪০৮৮ লটে খুটি স্থাপনের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার।

মঙ্গলবার গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান, আব্দুল মালেক, বাবুল মিয়া, জসিম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, ইজ্জত আলী, আব্দুল হাকিম, রানা মিয়া, আব্দুল হেকিম, আব্দুল মোতালিব ফকির, আঙ্গুর মিয়া, মৌলানা আবু তাহের, আব্দুর রউফ, আবুল কাশেম, ইসমাইল, খায়রুল মিয়া জানান, গভীর নলকূপ ও গ্রামের ৮৮টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য খুঁটি স্থাপন কাজে গত জানুয়ারি মাসে ১৬টি খুটি স্থাপনের পর প্রথম দফায় বাধাঁ দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় গত জুন মাসের ১০ তারিখ ঠিকাদার নিয়োজিত শ্রমিকরা আসেন। সরকারি হালট দিয়ে খুঁটি স্থাপন কাজেও বাধাঁ দেয় এই গ্রামের ইসমাইল খার ছেলে অলি আহম্মেদ খা ও আব্দুল হাই খার ছেলে আব্দুল কাইয়ুম সহ আরো ৫/৬ জন।

ঠিকাদার জয়নাল মিয়া জানান, বাঁধা প্রদানকারীরা শ্রমিকদের খুঁটি স্থাপনের কাজ বন্ধ না করলে প্রাণনাশের হুমকী দেয়। তিনি জানান, এর আগে জানুয়ারি মাসে এই সেচ প্রকল্পের আওতায় ১৬ টি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে।

কৃষক সমবায় সমিতির ম্যানেজার শেখ আব্দুল জব্বার আরো জানান, গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্পের আওতায় ৮০ একর জমি রয়েছে। এই জমিতে গভীর নলকূপের পানি দিয়েই সেচ দেয়া সম্ভব। কিন্তু যারা সেচ প্রকল্পের খুঁটি স্থাপন কাজে বাঁধা প্রদান করছেন, তারা চাচ্ছেন এই সেচ প্রকল্পের আওতায় আরেকটি সেলু মেশিনের সংযোগ দিতে, তাদের বাঁধার মুখে খুঁটি স্থাপন না হওয়ায় বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ৮০ একর জমি পতিত থাকার আশংকা দেখা দিয়েছে। অপর দিকে ওই গ্রামের ৮৮টি পরিবারেও বিদ্যুৎসংযোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আব্দুল জব্বার জানান, খুঁটি স্থাপনে বাঁধা প্রদানের ঘটনাটি গত ১২ জুলাই কেন্দুয়া থানা ওসি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া ২৪ জুলাই মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অপর আরেকটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তিনি।

থানায় লিখিত অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আবুল বাশার জানান, খুঁটি স্থাপনের কাজে কিছু দাবী নিয়ে বাঁধা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করারও দায়িত্ব নিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক মাহমুদ চৌধুরী।

এদিকে খুটিঁ স্থাপনে কেন বাঁধা প্রদান করা হয়েছে জানতে চাইলে ইসমাইল খার ছেলে অলি আহম্মেদ খা মঙ্গলবার বিকালে সত্যতা স্বিকার করে বলেন, আমাদের কিছু দাবী নিয়ে খুটিঁ স্থাপনের কাজে বাধাঁ দিয়েছি। দাবীগুলো লিখিত আকারে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ও নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর জমা দিয়েছি। কি কি দাবী ছিল তা কাগজ না দেখে বলতে পারছি না।

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সঙ্গে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন কাজে বাঁধা প্রদানের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকজন ব্যক্তি গভীর নলকূপের সেচ প্রকল্পের আওতায় একটি অগভীর নলকুপ (সেলু) মেশিনের সংযোগ স্থাপন করতে চায়। সংযোগ দেয়ার যদি নিয়ম তাকে সেটি দেবেন কর্তৃপক্ষ । কিন্তু আমি মনে করি তারা “শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” প্রকল্পের কাজটি বাঁধাগ্রস্থ করতে বি.এন.পির লোকদের সাথে গোপন আতাত করে এলাকার উন্নয়ন কাজকে থামিয়ে দিতে এ বাঁধা প্রদান করছে।

তিনি বলেন, আমি চাই এই সেচ প্রকল্পের কাজটি ও ৮৮ পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত কার্যকর করার। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কেন্দুয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, বাধা প্রদান কারীদের কি দাবী আছে তা আমার জানা নেই, বলতে পারবে নেত্রকোনা জি.এম অফিস। তবে আমি জেনেছি যেদিক দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনের প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে সে দিক দিয়ে বিদ্যুতের খুটিঁ স্থাপন ও সংযোগ হোক সেটা বাঁধা প্রদানকারীরা চান না।

(এসবি/এসপি/জুলাই ২৪, ২০১৮)