কবীর চৌধুরী তন্ময়


ছবিটি দেখে প্রথমেই আমার ভালো লেগেছে। কারণ, আমি নিজেও ভালোবাসার পাগল। হিংসা, নিন্দা আর সহিংসতার বিরুদ্ধে ভালোবাসাই পারে সমাজকে সভ্যতার দিকে নিয়ে যেতে।

হয়তো এই কারণেই ড. হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, 'একটি প্রকাশ্য চুম্বনে আমরা খান খান ক’রে ভেঙ্গে দিতে পারি হাজার বছর বয়স্ক বাঙলার সামরিক আইন ও বিধান।’

যা হোক, ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা গেল সে কয়েকটি পত্রিকায় কর্মরত আছেন। আবার তাঁর সাথে কাজ করা কিছু সমাজকর্মী ও সাংবাদিকের সাথে আলোচনা করেও জীবন আহমেদের ব্যক্তিগত চিন্তা-ধারা আর মন-মানসিকতার ব্যাপারটি আমার জানার মধ্যে চলে এসেছে।

একটি জায়গায় আমার খটকা লেগেছে। জীবন তাঁর ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে ছাত্রলীগের একটি ছেলের সাথে তাঁর এক বোনের চ্যাট করা অশ্লীল ভাষার স্ক্রিন শর্ট তুলে ধরে লিখেছে, ছাত্রলীগ বলে কথা মাঝে মাঝে মনে হয় এরা দেখতে মানুষের মতো সত্যি কি তারা মানুষ নাকি কিছু মানুষ রুপি জানোয়ার ?

জীবন একজন ফটোসাংবাদিক। তাঁর কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। ছাত্রলীগের কোনো একক কর্মীর দোষ দিয়ে পুরো ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীকে (সত্যি কি তারা মানুষ নাকি কিছু মানুষ রুপি জানোয়ার ?) জানোয়ার বলতে পারে কিনা আমার জানা নেই।

আসুন চুম্বনরত ছবির ব্যাপারে--

শুরুতে ছবিটি নিয়ে খটকা লাগে। অনেকের সহযোগিতা চাইলে তারাও এটির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। সবকিছু মিলিয়ে এই ধরনের ছবি, তাও টিএসসি এলাকার লোকেশন দিয়ে ভাইরাল করার মুল উদ্দেশ্যকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে আমরা অনেকেই নেমে পড়ি।

ব্যাপারটি এমন-

কুখ্যাত রাজাকার সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে--এটি যে পুরোপুরি এক ধরনের মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র (!) আমরা তখন এদেশের এক শ্রেণির মানুষকে বুঝাতে পারিনি।

জীবন আহমেদের চুম্বনরত ছবিটি যে উদ্দেশ্যমুলক, এটিও জীবন তাঁর অজান্তেই আরেকজন সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে ডকুমেন্ট আকারে তুলে ধরেছে।

সেখানে জীবন আহমেদ ওই সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে দু’দফা চুম্বনরত ছবি নিয়ে টেলিফোনে কথা বলার সময় ছবি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রতিবারই বলেছেন,‘ আমি আর সাংবাদিকতা করবনা। ছবি নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। আমি আমার ফেসবুক থেকে ছবি সরিয়ে ফেলেছি।’

শেষ পর্যন্ত ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ তাঁর চুম্বনরত ফটোর ব্যাপারে পরিস্কার তথ্য না দিয়ে নিজের ফেসবুক থেকে ফটোটি সরিয়ে ফেসবুক হ্যাক (আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হবার ২ ঘন্টা পর ফেরত পেলাম) হয়েছে মর্মে স্ট্যাটাস ভাইরাল করেছে।

জীবন আহমেদের ছবি নিয়ে দুটো প্রশ্ন বেশ জোরালো ভাবে উত্থাপন হয়েছে-

১. যুগলের চুম্বনের ছবি টিএসসি এলাকায় কেন বসিয়ে দিলেন?
২. পরিকল্পনা করে টিএসসিকে বেছে নেয়ার মুল উদ্দেশ্য কী?

আমি নিজেই জানি এবং মানার চেষ্টা করি- অনেক স্পর্শকাতর ছবি আছে এগুলো অনুমতিক্রমে প্রচার-প্রকাশ, ভাইরাল করতে হয়। আর ছবির দৃশ্য ধারণ করার আগেও অনুমতি নিতে হয়। সমাজ, সভ্যতা, দাঙ্গা, হাঙ্গামাসহ ছবির ব্যক্তিদ্বয়ের নিরাপত্তার ব্যাপারটিও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যা জীবন আহমেদের চুম্বনরত ছবির ব্যাপারে কোনোটাই মানা হয়নি।

ছবিটি ফটোশপের (?) নাকি সত্যিকারের (?)-এটির উত্তর একমাত্র জীবন আহমেদ দিতে পারবে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার যেটা, ভাইরাল হওয়া সংবাদের মাধ্যমে জানাগেল- চুম্বনরত ছবিটি অন্য ফটোগ্রাফারদের শেয়ার না করার জের ধরে ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

একটি ছবি ও ছবি দৃশ্য এবং ছবির লোকেশন অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরি করার সাথে-সাথে ব্যক্তিগত আঘাতের ঘটনাও ঘটে।

এটিও কি প্রত্যাশা ছিল..?

ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদের উচিত ছিল, চুম্বনরত ছবিটির ব্যাপারে তার স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরা। ছবিটি তুলে নিয়ে এই ছবির সত্যতাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আর কারো চাপে ছবিটি সরিয়ে ফললে আমাদের সবার উচিত হবে জীবনের পাশে দাঁড়ানো এবং তাঁর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)