রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : নির্মাণ শ্রমিক বাবা অনেক কষ্ট করেই বড় করে তুলেছেন তাকে। বাবার পথ ধরে তিনিও তিন চাকার ভ্যান চালিয়ে সংসার নির্বাহে সহায়তা দিয়েছেন তাকে। এখন তিনি আলিশান বাড়ির মালিক। সরকারি জায়গার চাঁদনি দখল করে চুটিয়ে মাদকের ব্যবসা করেন। আছে চোরাচালানের যোগ। অঢেল সম্পদ আর টাকার মালিক কলারোয়ার কেড়াগাছি ইউনিয়নের বাকসা গ্রামের সেলিম হোসেন এখন বাবাকে খেতে দেন না। বাবা লিয়াকত সরদার রাজমিস্ত্রীর যোগাড়ে হিসাবে কাজ করেন। মাঝে মাঝে রাস্তার ধারে চট বিছিয়ে সবজি বিক্রি করতেও দেখা যায় তাকে।

এই সেলিম হোসেন রাজনৈতিক তকমাও পেয়েছেন মন্দ না । তিনি এখন কেড়াগাছি ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক। ক্ষমতা আর ধার ভারও অনেক বেশি। বেলেডাঙ্গা বাজারে সরকারি জমিতে তৈরি চাঁদনির একাংশ দখল করে নিয়েছেন সেলিম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। সেখানে একদল বখাটে ও মাদকসেবী নিয়ে দিনরাত টালমাটাল কান্ডকারখানা তার। ভয়ে কেউ বাধা দেন না।

কিন্তু বেলেডাঙ্গা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বেল্লাল হোসেন সম্প্রতি সেলিমকে বলেছেন ‘তুমি সরকারি চাঁদনি দখল করে আড্ডা জমিয়ে মাদক কারবার করো কেনো। এটা বন্ধ করো’। এতেই আঁতে ঘা লেগেছে সেলিম হোসেনের । তিনি বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা বেল্লাল হোসেনকে খুন করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। এরপর সোমবার সন্ধ্যায় সেলিম তার মাদকসেবী হাতুড়ি বাহিনী নিয়ে বেলেডাঙ্গা বাজারে মহড়া দিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে গেছে। এর আগে মুক্তিযোদ্ধা বেল্লাল হোসেন কলারোয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন সেলিমের বিরুদ্ধে।

ভ্যান চালক সেলিম হোসেন এক সময় পেশা পরিবর্তন করে বেলেডাঙ্গা বাজারে বিকুল দর্জির দোকানে কাজ নেন । কিছুদিন যেতে না যেতেই ওই দোকান থেকে টাকা পয়সা লুটে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এরপর টানা দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি থাকতেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা এলাকার ভগ্নিপতি শাহজাহানের বাড়িতে। সেখানে সেলিম হোসেন মজে যান ডলার চক্রের সাথে । এখানকার একটি ডলার চক্র নিরীহ মানুষের কাছে টাকার বিনিময়ে জাল ডলার বিক্রি করে থাকে। বেশ টানা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাল ডলার কারবার করে ভ্যান চালক সেলিম ফুলে ফেঁপে ওঠেন। একই সময়ে শুরু করেন সুদে টাকা খাটানোর কারবার।

এমনকি জাল ডলার কারবারের আড়ালে হাট ইজারাও নেন সেলিম। এলাকা জুড়ে বেড়ে যায় তার মাস্তানি। এখন থেকে বছর দেড়েক আগে তিনি বোন জামাই শাহজাহানের বাড়ি থেকে ফিরে গেছেন নিজ গ্রাম বাকসায়। সেখানেই তিনি গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। স্থানীয়দের মতে এর বর্তমান বাজার মূল্য কোটি টাকার কাছাকাছি। আর জন্মদাতা বাবা লিয়াকত আলি তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন পাশেই একটি খুপড়ি ঘরে। খেয়ে না খেয়ে দিন চলে তার। খোঁজ নেন না ক্ষমতাবান ও গুনধর ছেলে। সেলিম হোসেন একা ভাই। দুই বোন।

ভ্যানচালক সেলিম হোসেন আশাশুনির বুধহাটায় বেশ খোশ মেজাজেই ছিলেন। সেখানে একবার ভারতীয় গরু বেচাকেনার কয়েক লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে সেলিম ছিল এর ছিনতাইকারী। কিন্তু রাজনৈতিক দাপটের মুখে তিনি পার পেয়ে যান। এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে তাকে প্রভাবশালীরা ছাড়িয়ে আনেন।

সেলিম সীমান্তের চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে বেশ জড়িয়ে রয়েছেন। ভারত থেকে নিয়মিত মাদক আসে তার হাত বেয়ে। বেচাকেনাও চলে। সন্ধ্যায় বেলেডাঙ্গার চাঁদনি এলাকায় কাউকে যেতে দেন না তিনি। ক্ষমতা তার এতোটাই বেশি যে এরই মধ্যে বেলেডাঙ্গা বাজার কমিটির সেক্রেটারি আলি হোসেনকে বিনা কারণে গলাধাক্কা দিয়েছেন যুবলীগ নেতা সেলিম হোসেন। সেই সেলিম হোসেন এখন পুলিশের খাঁচায়। সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এজন্য এসব বিষয়ে তার সাথে কথা বলা যায়নি। কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মদ বলেন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখছি। জেলা গোয়ন্দা পুলিশ পরিদর্শক আলি আহমেদ হাসেমী বলেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তবে কেড়াগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন সেলিম হোসেন যুবলীগ নেতা। তিনি জাল ডলার চক্রের সাথে জড়িত ছিলেন কিনা জানা নেই। তবে আশাশুনির বুধহাটায় সেলিম বোন জামাইয়ের সাথে ব্যবসা করতেন। তিনি ভ্যান চালাতেন কিনা তাও জানা নেই জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন নিজ এলাকায় তিনি কোনো অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট নন। তিনি রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের শিকার। এখন ভাগ্যের জোরে অঢেল টাকার মালিক ,বাড়িরও মালিক। তার সম্পর্কে আমার তেমন খারাপ কিছু জানা নেই।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২৫, ২০১৮)