কবীর চৌধুরী তন্ময় 


ব্যাপারগুলো খারাপ লাগে। রক্ত টগবগিয়ে উঠে। ইচ্ছে করে-আমিও খুনী হই। ধরে-ধরে নরপশুদের হত্যা করি। এই সমাজ থেকে যত নরপশু আছে; এক মিনিটের মধ্যে তাঁদের হত্যা করি...। আমারও খুনী হতে ইচ্ছে করে....!!

কিন্তু আমি হতাশ নই। আমার ভিতরে হতাশাবোধ হয় না যে, আমার আর এই দেশে থাকতে ইচ্ছে করে না! এই দেশ আমার নয়!!

খবরটি অত্যন্ত মর্মাত্মিক। খাগড়াছড়ির ৯ বছরের পূর্ণাকে প্রথমকে পরিকল্পতিভাবে ধর্ষণ করেছে। এখানেই বর্বরগুলো ক্ষ্যান্ত হয়নি। পশুগুলো পূর্ণার দুটো হাত কেটে দিয়েছে। পূর্ণার যৌনাঙ্গ কেটে ক্ষত বিক্ষত করেছে! পায়ুপথে গাছের গুড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে বর্বরগুলো তাদের নিকৃষ্ট পশুর পরিচয় তুলে ধরতেও দ্বিধা করেনি।

এইটুকু পূর্ণা কী করতে পারত? ধর্ষণ, হাত কাটা, যৌনাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত, পায়ুপথে গাছের গুড়ি..
উফ! ভাবতেই আমার শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠে। প্রচন্ড ইচ্ছে করে, সবগুলো নরপশুদের হত্যা করতে, খুনী হতে..!!

অন্যদিকে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এটাকে মৃত্যু নয়, হত্যা করেছে। রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের জনগণ প্রতিনিয়ত হত্যা হচ্ছে। পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছে।

শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়ের ছবি স্যোশাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। আমি অপলক তাকিয়ে অশ্রু ধরে রাখতে পারেনি। এখানেও কতিপয় নরপশু হত্যার মাধ্যেম আগামীর উজ্জল নক্ষত্র শিক্ষার্থীর জীবনের আলো নিভিয়ে দিয়েছে।

তারও আগে- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়ার আগে তার পরিচয় লুকাতে হানিফ পরিবহনের বাসের চালক মুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন।

উফ..!! কতটা বর্বর, নৃশংস!

পায়েলকে বহন করা হানিফ পরিবহন ভাটেরচর সেতুর আগে বাস যানজটে পড়লে চালককে বলে গাড়ি থেকে নামেন পায়েল। তিনি ফেরার আগেই বাস সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং সেতুর ওপর উঠে দাঁড়ায়। পায়েল দৌড়ে এসে দরজার কাছে দাঁড়ালে চালক ভলভো গাড়ির দরজা খুলতে ‍সুইচ টিপে দেন। কিন্তু দরজা খোলার সময় ধাক্কা লেগে পায়েল নাকে-মুখে আঘাত পান এবং পড়ে যান। পায়েলের নাক-মুখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখে চালক কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। এরপর আবার থামে। তখন সুপারভাইজার পায়েলকে দেখে এসে চালককে বলে- ‘ওস্তাদ অজ্ঞান হয়ে গেছে, উঠাই নিব?’

তখন জামাল হোসেন চালকের আসন থেকে উঠে এসে বলে- ‘বিপদে পড়ে যাবি’। তারপর নিজেই পায়েলের মাথার দিকে অংশ ধরে এবং সুপারভাইজারকে পায়ের দিকের অংশ ধরতে বলে। এরপর পায়েলের মুখমণ্ডল রাস্তায় আছড়ে ফেলে। তারপর সেতু থেকে নিচে পানিতে ফেলে দেয়।

খাগড়াছড়ির পূর্ণাকে ধর্ষণ ও হত্যা, শিক্ষার্থী পায়েলকে পরিকল্পতিভাবে হত্যা এবং শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু-এগুলো রাষ্ট্রযন্ত্রের তথাকথিত নীতিনির্ধারকের হৃদয় স্পর্শ না করলেও, এই রাষ্ট্র এইসব হত্যার দায়ভার এড়াতে পারে না।

ধর্ষক-খুনীরা চায়- আমি আপনি বলি, এই দেশ আমার নয়। এই দেশে আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। এই দেশে আর থাকতে ইচ্ছে করে না।

দুঃখীত! এই দেশ আমার। এই দেশ আমাদের। এই দেশ কোনো খুনী কিংবা ধর্ষকের নয়। এই দেশ কোনো ভন্ড রাজনীতির আড়ালে মানুষ হত্যাকারীর নয়।

শুধু আমাদের একটু জেগে উঠতে হবে। ধর্ষক-খুনীদের সামাজিক-রাষ্ট্রীয়ভাবে বিতারিত করতে হবে। তাদের পাপের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে আমাদের একে অন্যের হাত ধরে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)