আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েও এখনো সরকার গঠন করতে পারেনি পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা ও রাজনীতিক ইমরানের খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিঅাই)। এর মাঝেই পিটিঅাইকে সরকার গঠনে বাধা দেয়ার লক্ষ্যে দেশটির প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি পার্লামেন্টে বিরোধী দল হিসেবে একসঙ্গে থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার জোট (এআরডি) গড়তে সম্মত হয়েছে।

পার্লামেন্টে এই দুই দল একসঙ্গে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে ‘সমন্বিত যৌথ কৌশল’ গঠনে ঐক্যমতে পৌঁছেছে। পিপিপি এবং পিএমএল-এন দেশটির এবারের নির্বাচনে যৌথভাবে ১১০ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া ইমরানের খানের পিটিআইয়ের জয় ১১৫ আসনে।

পাকিস্তানি দৈনিক ডন বলছে, গত ২৫ জুলাই পাকিস্তানের এগারোতম সাধারণ নির্বাচনের অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো পিএমএল-এন ও পিপিপি রোববার বৈঠক করেছে। বৈঠকে পার্লামেন্টে বিরোধী দলে থাকাকালীন তাদের কৌশল নির্ধারণ ও হাতে হাত রেখে চলার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে; যা ইমরান খানের জন্য সামনের কঠিন সময়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বৈঠকের ব্যাপারে জানতে পিএমএল-এনের নেতা মুশাহিদ হুসাইন সায়েদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা শুরু মাত্র। জাতীয় পরিষদের সাবেক স্পিকার সর্দার আয়াজ সাদিকের বাসভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পিএমএল-এনের এই নেতা বলেন, ‘এটা অত্যন্ত সুন্দর একটি বৈঠক ছিল। এটাকে আপনি মনের বৈঠকও বলতে পারেন। বৈঠকে দুই দল একটি বিষয়ে একমতে পৌঁছেছে যে, ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচন চুরি হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, উভয় পক্ষই একমত পোষণ করেছে যে, নির্বাচনী ফলাফল পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা উচিত এবং পার্লামেন্টে ইমরান খান নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকারকে কঠিন সময়ের মুখোমুখি করার জন্য ‘একটি সমন্বিত যৌথ বিরোধী কৌশল’ হাতে নেয়া হবে। সোমবার আবারো পিপিপি ও পিএমএল-এনের নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন দীর্ঘ ৫৬ ঘণ্টা পর শনিবার আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেছে। এতে জাতীয় পরিষদের একক বৃহত্তম দল হিসেবে ইমরান খানের পিটিআই ১১৫ আসনে জয়ী হয়েছে। তবে দেশটিতে সরকার গঠনের জন্য ১৩৭ আসনের প্রয়োজন। অন্যদিকে, পিএমএল-এন ও পিপিপি যথাক্রমে ৬৪ এবং ৪৩ আসনে জয় পেয়েছে।

এদিকে, পিপিপি ও পিএমএল-এনের সূত্রগুলো বলছে, তারা সংসদের বিরোধীদলের জোটে মাওলানা ফজলুর রেহমানের মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমালকে (এমএমএম) আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। পিপিপি-পিএমএল-এন জোটে এমএমএ যোগ দিলে তাদের মোট আসন সংখ্যা হবে ১১৭। যা পিটিঅাইয়ের প্রাপ্ত আসনের চেয়ে বেশি।

এর আগে ২০০২ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর পিপিপি এবং পিএমএল-এন নওয়াবজাদা নাসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে একই ধরনের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার জোট (এআরডি) গঠন করেছিল। তবে সেই সময় এমএমএ সংসদের অপর একটি বিরোধী জোটে যোগ দিয়েছিল।

ওই সময় এআরডি এবং এমএমএ সংসদে সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মুশাররফের প্রধানমন্ত্রী জাফরুল্লাহ জামালিকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে। প্রায় এক বছর ধরে পার্লামেন্টকে অকার্যকর করে রাখে বিরোধীদের এই জোট; যা পরবর্তীতে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে ক্ষমতাসীন সামরিক শাসককে বাধ্য করে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ৩০, ২০১৮)