নড়াইল প্রতিনিধি : একনেক সভায় অনুমোদনের পর প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও চার লেন বিশিষ্ট লোহাগড়ার মধুমতি নদীর কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। কবে নাগাদ এই সেতুর কাজ শুরু হবে তা সংশ্লিষ্ট কেউই বলতে পারছেন না। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) সভায় ২’শ ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বয়ে লোহাগড়ার মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পের সার সংক্ষেপ থেকে জানা গেছে, এই সেতুর নির্মাণ কাজ ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনে কাজ শেষ হবে। কালনা সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬’শ ৮০ মিটার, প্রস্থ ১৮ দশমিক ২০ মিটার এবং ১০টি পিসি গার্ডার ও তিনটি বক্স গার্ডার। এছাড়া ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ ও ১২ দশমিক ৬৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কাজ রয়েছে। তবে, প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রায় ছয়মাস অতিবাহিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কাজই শুরু হয়নি।

এমনকি সেতুর নকশাও প্রণয়ন করা হয়নি। এ ব্যাপারে উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী সংগঠন কমিটি নড়াইলের আহ্বায়ক শরীফ মুনীর হোসেন বলেন, কালনা সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হওয়া সত্ত্বেও কাজ শুরু না হওয়া দুঃখজনক।

নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কালনাঘাটে দ্রুত সেতু নির্মাণ দরকার। সেতু হলে ঢাকার সাথে বেনাপোল স্থলবন্দর, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এতে সময় ও জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হবে। তিনি জানান, কালনাঘাট দিয়ে বেনাপোল-ঢাকা সড়কের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, যশোর-ঢাকা ১৬০ কিলোমিটার, নড়াইল-ঢাকা ১২৬ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকা ১৯৫ কিলোমিটার। অথচ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকা যেতে এসব সড়কে ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয়।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ব্যবসায়ী সুধীর বিশ্বাস (৪২) বলেন, সেতুর অভাবে কালনা ফেরিঘাটে এসে আমাদের এক থেকে দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। মালামাল পরিবহনে সমস্যা হয়। যানবাহনের ব্যাপক চাপ থাকা সত্ত্বেও কখনো একটি, আবার কখনো দু’টি ফেরিতে যানবাহন পারাপার করা হয়।

কালনাঘাটের ফেরিচালক মফিজুর রহমান ও বুলু ঠাকুর জানান, কালনা ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ গাড়ি পারাপার হয়। গাড়ি পারাপারের নিবন্ধন খাতা থেকেও এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ফেরি বিকল হওয়ায় মাঝে-মধ্যে সমস্যা হয়। ঢাকাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা জানান, কালনাঘাটে সেতু বাস্তবায়ন না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

ফেরিতে বাস প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে এবং গাড়ির সারি (সীরিয়াল) থেকে ২০ ও বকশিসের নামে ১০ টাকা করে দিতে হয়। যদিও সরকারি নিয়মানুযায়ী বাসপ্রতি ৫০ এবং ছোটবাস ও ছোট ট্রাক প্রতি ৩০ টাকা, মাইক্রোবাস প্রতি ২০ টাকা, জিপ, কার ও বেবিট্যাক্সি প্রতি ১০ টাকা এবং ভ্যান ও মোটরসাইকেল প্রতি পাঁচ টাকা করে ধার্য করা হয়েছে।

(আরএম/জেএ/জুলাই ১৪, ২০১৪)