কবীর চৌধুরী তন্ময়


দুঃখিত! নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের হাসিতে আপনার সমস্যা হলেও আমার হয়নি। যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের পজেটিভ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ব‌্যর্থ ও হতাশাজনক পরিবেশও নিজের অনুকূলে চলে আসে।

এই ধরুন, তুরস্কের এরদোগান সামরিক অভ্যুত্থান ঠেকিয়েছে সামান্য একটা মিথ্যাচার করে। একটি ভিডিও বার্তায় বলেছিল, 'সকল কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আপনারা যে যেখানে আছেন প্রতিরোধ গড়ে তুলোন।'

ব্যস..! সবাই রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এরদোগান নিজের ক্ষমতা ফিরে পান।

যে কোনো সরকার টিকে থাকে তার রাজনৈতিক কৌশলের উপর। সময় উপযোগি সিদ্ধান্ত আর রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা সরকারকে অনেক দূর নিয়ে যায়। আর আমাদের আছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। যার রাজনৈতিক কৌশল, সময় উপযোগি সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা আজ বিশ্বে উজ্জল নক্ষত্র।

সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে যেভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত আঘাত করে আপনারা অনেকে স্ট্যাটাস ভাইরাল করেছেন-এটা কোনো সভ্য মানুষ করতে পারে বলে আমার মনে হয় না।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের হাসিটা সমস্যা নয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিঁনি কান্নাকাটি করলেও নিহত হওয়া শিক্ষার্থীরা ফিরে আসতো না। সমস্যা হচ্ছে--সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে তার আন্তরিকতা।
প্রথম মন্তব্য-যে যতটুকু অপরাধ করেছে তার অপরাধের শাস্তি তাকে পেতেই হবে। কিন্তু তিঁনি এই কথার পরে যখন ভারতের উদাহরণ টেনেছেন-তখনই মনে হয়েছে, সড়কে শিক্ষার্থী পায়েলকে মুখ থেঁতলে মেরে ফেললেও কারো কোনো দায় নেই। কারণ, অন্য দেশেও সড়ক দূর্ঘটনা হচ্ছে। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর গাড়ি উঠিয়ে দিলেও রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব নেই, কারণ বিদেশে প্রতি ঘন্টায় এতো এতো মানুষ মারা যাচ্ছে।

আমার বাংলাদেশে একটি মানুষও অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বরণ করুক-এটা আমি চাই না। আর এই পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র পরিচালনার করার দায়িত্ব দিয়েছি আপনাদের।

যাত্রীদের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বাস্তবমুখী করা, রাস্তা প্রশস্ত করা, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি রাস্তায় চলবে কি চলবে না-এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের উপর ছেড়ে দিয়েছি।
আবার কোনো ড্রাইভার-হেল্পার যদি কোনো অপরাধ করে তার কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্বও আপনার।

আর আপনারা যারা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন-প্লীজ! পদত্যাগ করুন। অনেক যোগ্য লোক সুযোগের অপেক্ষায় কিচ্ছু করতে পারছে না। এবার তাদের সুযোগ দিয়ে দেখুন।

আর হে, এই মুহুর্তে আপনারা যারা শাহজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করেছেন-তার এই পদত্যাগেই সকল কিছু রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে..? নিশ্চয় নয়। তাহলে আমাদের উচিত হবে, মুল সমস্যায় কাজ করতে সরকারকে বাধ্য করা।

আমরা যেমন খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের মধ্যেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবো না, তেমনি পরিবহন শ্রমিকরাও তাদের দীর্ঘদিনের স্বভাব পরিবর্তন করতে পারবে না।

আসুন, আগে আমরা যেখান-সেখান থেকে গাড়িতে উঠা বন্ধ করে দেই। রাস্তা পারাপারের জন্য ফুটওভারব্রীজ ব্যবহার করি। ওভার স্প্রীড, মোবাইলে কথা বলা, এলোমেলো গাড়ি চালানো দেখলে গাড়ির সকল যাত্রী এক হয়ে গাড়িকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভারকে ভালো করে জিজ্ঞেস করি। সমস্যা মনে করলে তাৎক্ষনিকভাবে ৯৯৯ ফোন করেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।

থাক, চলুক, কিচ্ছু হবে না, এটা অভ্যেস হয়ে গেছে, একটু তাড়াতাড়ি যান ভাই, দুই টাকা কম নেম, একটু ঘুরে আসুন-পরে ভাড়া দিচ্ছি--এই ধরনের অভ্যেসগত সমস্যা আগে আমাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।

মন্ত্রী শাহজাহান খানের হাসি সমস্যা নয়। সমস্যা তার আন্তরিকতা। আমাদের উচিত হবে, তার আন্তরিকতার ঘাটতি কোথায় এবং কেন সেটা নিশ্চিত করে তার দাবি জানানো বা সমালোচনা করা।

আর কোনো পায়েলের মুখ থেঁতলে কেউ হত্যা করুক, ফুটপাতে দাঁড়ানো আর কোনো শিক্ষার্থীদের উপর ঘাতক বাস উঠে পড়ুক-এটা আমরা চাই না। আর যারা এই অপরাধের সাথে যুক্ত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে মন্ত্রী শাহজাহান খান ও তার সরকার সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে আন্তরিক বলে জনগণকে আশ্বস্ত করবে।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)