ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : এলাকাবাসীর বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে উন্মুক্ত স্থানে অটোরাইস মিলের বর্জ্য ফেলায় পরিবেশে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের বড়ইচারা এলাকায় রহমত এন্টারপ্রাইজ এন্ড এগ্রো ফুডের ময়লা দূর্গন্ধযুক্ত পানি, ধানের তুষ, ছাই ও মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পুরো গ্রামবাসী।

এ বিষয়ে মিল কর্তৃপক্ষের সাথে গ্রামবাসীর কয়েক দফা বৈঠক করেও কোন সুরাহা হয়নি। ফলে পরিবেশের চরম বিপর্যয়ের মধ্যেই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। সরেজমিন এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিকার চেয়ে এলাকার কয়েক’শ নারী-পুরুষ সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন।

এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ৩ বছর পূর্বে বড়ইচারা গ্রামে ‘রহমত এন্টারপ্রাইজ এন্ড এগ্রো ফুড’ নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর একই মালিকের আরও একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান সেখানেই যুক্ত করা হয়। এই শিল্প প্রতিষ্ঠান দু’টির দূষিত বর্জ্য মিলের সামনের একটি ছোট উন্মুক্ত গর্তে ফেলা হয়। দিনের পর দিন সেই দুষিত বর্জ্য গর্ত ভরে পচে উপচে পড়ায় আশে-পাশের এলাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সম্প্রতি ফটিক (৪) নামের এক শিশু ওই দূষিত বর্জ্যরে গর্তে পড়ে গিয়েছিলো। অনেক কষ্ট করে তাকে উদ্ধার করা হয়।

সুত্র জানায়, নিজস্ব জমিতে বর্জ্য শোধনাগার থাকার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। লোকালয়ের বাহিরে কোন নির্জন স্থানে বর্জ্য না ফেলে উন্মুক্ত স্থানে নিয়মিত বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রাখায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জীব-বৈচিত্র। এছাড়া মিলের বিকট শব্দে বাড়িতে থাকা দায় হয়ে পড়েছে গ্রামবাসীর। মিলের ছাই ও ধানের তুষ উড়ে আশে-পাশের বাড়ী-ঘরে পড়ছে। বারংবার মিল কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন কাজ হচেছনা বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।

এলাকার মহির উদ্দিন জানান, উন্মুক্ত ভাবে দূষিত বর্জ্য ফেলায় পরিবশের চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এছাড়াও মিলের ছাই ও ধানের তুষ উড়ে আশে-পাশের প্রতিটি বাড়িতে পড়ায় নষ্ট হচ্ছে জিনিষপত্র। আবুল কালাম জানান, ওই মিলের ছাই ও ধানের তুষের কারণে তার ছেলের চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। পরে ৫ হাজার টাকা খরচ করে চোখ সারানো হয়েছে। এছাড়াও মিলের বিকট শব্দে বসবাস করাই তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভির আহমেদ ও রুহুল আমীন জানান, প্রকট শব্দে বাড়িতে পড়াশোনা করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ক্লাশে গিয়ে শিক্ষকের কথা ঠিকমত শোনা যায় না। তিন বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজমান।

রোকেয়া খাতুন জানান, মিলের ছাই পড়ে মিনারা খাতুন নামের এক মহিলার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সে বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া দূর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে মশা-মাছির অত্যাচারে অতিষ্ঠ তারা।

রহমত এন্টারপ্রাইজ এন্ড এগ্রো ফুডের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ বলেন, আমরা সব সময় শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি বের করে দিতে চাই। যা গ্রামের লোক বাঁধা দেয়ায় ওই গর্তে পানি জমে উপচে পড়ছে। এতে আমার কোন দোষ নেই।

এসব বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম জানান, অটো রাইস মিলের দূষিত বর্জ্যরে কারণে ওই গ্রামে বসবাস করাই দায় হয়ে পড়েছে। তারপরও আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছি।

সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা জানান, গ্রামবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। মিলের দুষিত বর্জ্যরে কারণে এলাকায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রোগ-বালাইয়ের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত মানুষ। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে মিলটি। এছাড়াও দুষিত বর্জ্যরে কারণে হুমকির মুখে পড়েছে সরকারী রাস্তা। বিষয়টি তিনি উপর মহলকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল মামুন জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ দুষণকারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

(এসকেকে/এসপি/জুলাই ৩১, ২০১৮)