রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া) : মধুমতি নদীর কালনা ফেরিঘাট। এই ঘাটের পাশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া এবং পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ফেরিঘাটে জরাজীর্ণ ফেরিতে পারাপার করা হচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহন। ফেরির তলদেশে অসংখ্য ছিদ্র, আবার পাটাতন পুরোটাই জোড়াতালি দেওয়া। এ অবস্থায় পানি সেচে সেচে চালাতে হয় ফেরি। এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে যানবাহন। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও পরিস্থিতি পরিবর্তনে কর্তৃপক্ষের কোনো জোরালো উদ্যোগ নেই। পারাপারের সময়ে আতঙ্কে থাকেন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।

ফেরিকর্মী (স্টাফ) ও স্থানীয় লোকজন জানান, ২০১৪ সালের ১৮ জুন গভীর রাতে এ ধরনের জরাজীর্ণ ইউটিলিটি টাইপ-১ এর ১৪ নম্বর ফেরিটি পানি উঠে ছয়টি ট্রাকসহ ডুবে গিয়েছিলো। ফেরিতে যাত্রীবাহি বাস বা যাত্রী ছিল না। যাত্রী থাকলে প্রাণহানি ঘটতে পারত।

ফেরির তত্ত্বাবধায়ক বিল্লাল হোসেন জানান, এ ঘাটে বর্তমানে দুটি ফেরি আছে। একটি ইউটিলিটি টাইপ-১ এর ১৬ নন্বর ফেরি। এটি ছোট, এতে ৭-৮টি গাড়ি ধরে। অন্যটি ইউটিলিটি টাইপ-১ এর ৪ নন্বর ফেরি। এটি বড়, এ ফেরিটিতে ১৬-১৭টি গাড়ি ধরে। দুটি ফেরি দিয়েই পানি ওঠে। বড় ফেরিটি জরাজীর্ণ বেশি। এর তলদেশে অসংখ্য ছিদ্র এবং পাটাতন পুরোটাই জোড়াতালি দেওয়া।

তিনি জানান, ১৯৮৬ নিমার্ণ করা এসব ফেরির পাটাতন সেকালে। ৩০ টনের বেশি ওজনের ট্রাক এ পাটাতন সইতে পারে না। বর্তমানে এ ধরনের ট্রাক বেশি চলে। এ জন্য পুরো পাটাতন ফেটে গেছে। আর যেখানে ফাটে সেখানে জোড়াতালি দেওয়া হয়। এভাবে এখন পুরো ফেরির পাটাতন জোড়াতালি দেওয়া। তাই বৃষ্টি হলেই পাটাতন দিয়ে পানি ঢোকে। এছাড়া পুরোনো হওয়ায় তলদেশে অসংখ্য ছিদ্র হয়েছে। তলদেশ দিয়েও পানি ঢোকে। তাই সব সময়ে পানি সেচে সেচে এ ফেরি চালতে হয়। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এ ফেরিঘাট দিয়ে চলাচলে ঢাকার সঙ্গে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়াসহ এ এলাকার দূরত্ব অনেক কমে আসে।

ইজারাদার মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘আগামী তিন বছরের জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে ফেরিঘাট ইজারা নিয়েছি। কিন্তু ফেরির দৈন্যদশায় ঝুঁকির মধ্যে চলতে হচ্ছে। ফেরির জন্য অনেকবার বলেছি। ফেরি বিভাগের গাফিলতির জন্য এ অবস্থা।’

গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) এ ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বলেন, ‘এ ঘাটে ফেরি মূলত তিনটি। এর একটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেটি ফিরে এলে আরেকটি মেরামত করতে পাঠানো হবে। সংস্কার বা মেরামত করা হলে ফেরির সমস্যা থাকবে না বলে তিনি জানান।

(আরএম/এসপি/আগস্ট ০১, ২০১৮)