আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বিনা সুদে ঋণ দেয়ার প্রলোভনে জামানত সংগ্রহের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে এসকেএস নামের একটি এনজিও’র কর্মকর্তারা। বুধবার সকালে সাধারণ গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে এনজিও’র অফিস তালাবদ্ধ দেখে কর্মীদের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি জেলার মুলাদী উপজেলা সদরের বয়াতী মার্কেটের।

ভূক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, গত দুই সপ্তাহ পূর্বে পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর উপজেলা থেকে দুইজন প্রতারক মুলাদী, হিজলা উপজেলা ও কাজিরহাট থানার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার কথা জানায়। ওইসময় প্রতারকরা কয়েকটি বাড়ি নিয়ে ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠন করে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখায়। এসকেএস নামের এনজিও’র ওই কর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার বিপরীতে পাঁচ হাজার টাকা এবং এক লাখ টাকার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা করে জামানত আদায় করে।

বিনা সুদে ঋণ পাওয়ার আশায় কোনো কিছু না জেনেই সহজ সরল গ্রামবাসী তথাকথিত এনজিও এসকেএস’র কর্মকর্তাদের কাছে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে দেয়। কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের কাছে টাকা প্রাপ্তির একটি করে টোকেন দিয়ে মুলাদী বাঁধের ওপর বয়াতী মার্কেটে অফিস রয়েছে বলে ঠিকানা লিখে দিয়ে ৮ জুলাই ঋণের টাকা দেয়ার কথা জানায়। এভাবে এসকেএস’র দুই কর্মী ১৫ দিনে মুলাদী, হিজলা উপজেলা এবং কাজিরহাট থানার প্রায় আটশ’ মানুষের কাছে থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

মুলাদী সদর ইউনিয়নের ভাঙারমোনা গ্রামের ভূক্তভোগী নুর মোহাম্মদ হাওলাদার জানান, তাদের গ্রামের ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠণ করে এসকেএস জনপ্রতি পাঁচ হাজার করে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। উত্তরচর ডাকাতিয়া গ্রামের আছমা বেগম জানান, তার এলাকায় ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠণ করেছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জামানত নিয়েছে ওই এনজিও’র কর্মকর্তারা। কাজিরহাট থানার আন্ধারমানিক ইউনিয়নের মনির হোসেন হাওলাদার জানান, ওই এলাকায় তাকে দল নেতা করে ২৫ জনের একটি ইউনিট গঠণের মাধ্যমে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে এসকেএস’র দুই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে জামানতের টাকা প্রদানকারী গ্রাহকরা ঋণ নেয়ার জন্য মুলাদী বাঁধের ওপর বয়াতী মার্কেটে গিয়ে অফিস তালাবদ্ধ দেখে এনজিও’র কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পেয়ে হতাশ হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে গ্রাহকরা ভবন মালিককের কাছে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় কোনো এনজিও’র কাছে কক্ষ ভাড়া দেয়া হয়নি। এনজিও’র কাছে ভাড়া না দেয়া হলেও একটি কক্ষের সামনে এসকেএস’র সাইনবোর্ড ঝুঁলতে দেখে ভূক্তভোগীদের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে বয়াতী মার্কেটের মালিক মোশারফ হোসেন বয়াতী বলেন, এসকেএস নামের এনজিও’র দু’জন কর্মকর্তা কিছুদিন আগে মার্কেটের একটি কক্ষ ভাড়া নেয়ার জন্য আসে। কিন্তু এনজিও’র মূল কাগজপত্রসহ চুক্তিপত্র ও অগ্রিম ভাড়া ছাড়া অফিস ভাড়া দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিলে এসকেএস’র কর্মীরা তাদের ‘বড় অফিসার’ আসার কথা বলে কালক্ষেপণ করে এবং কক্ষের সামনে একটি সাইনবোর্ড লাগানোর অনুমতি চাইলে তাদের নিষেধ করা হয়। পরে এনজিও কর্মীরা ৬ আগস্ট চুক্তিপত্র সম্পাদনের কথা জানিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় একটি কক্ষের সামনে এসকেএস’র সাইনবোর্ড লাগায়। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা মুলাদী থানায় অভিযোগ করেছেন।

মুলাদী থানার ওসি জিয়াউল আহসান জানান, টাকা দেয়ার আগে এনজিও এসকেএস’র সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন ছিল। একটু সচেতন হলে এভাবে প্রতারণার শিকার হতে হতোনা। তিনি আরও জানান, গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়ার পর এনজিও এসকেএস’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্ধানে আশপাশের থানায় বেতার বার্তা পাঠানো হয়েছে।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ০৮, ২০১৮)