জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী অভিনব কায়দায় গ্রাহকদের প্রতারনার ফাঁদে ফেলে প্রতারনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জামালপুরের ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর রেজাউল করিম খানের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সংঘবদ্ধ চক্র। চক্রটি গ্রাহক হয়রানি ছাড়াও গ্রাহকের টাকা নিয়ে সুদের ব্যবসা, নিয়োগ বানিজ্য,জাল সার্টিফিকেটের ব্যবসা,মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা ও নারী ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জেলার বিভিন্নস্থানে ঘুরে অভিনব গ্রাহক প্রতারনার পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জামালপুর শহরের পাথালিয়া গ্রামের দরিদ্র রোখসানা বেগম। তাকে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ৩বছর মেয়াদী স্থায়ী আমানত করায় জামালপুরের ডিভিশনাল কো-অডিনেটর রেজাউল করিম। তার কাছ থেকে এককালিন ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ৬ হাজার টাকার রশিদ হাতে ধরিয়ে দেয়। স্থায়ী আমানতের প্রতিমাসে লভ্যাংশ দেয়ার নিয়ম না থাকলেও তার টাকা সুদে লাগিয়ে প্রতিমাসে ৬হাজার টাকা আয় করে ৬শ টাকা হাতে গুজে দেয় বলে জানিয়েছে রোখসানা বেগম। পলিসির নামে এভাবেই সুদের ব্যবসা করে আসছে রেজাউল করিম।

কথা হয় মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের সাধুপুর গ্রামের প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ট আমিনুর ইসলামের সাথে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৪ কিস্তি দেয়ার পর ১০ হাজার টাকার বোনাস ২৫ হাজার টাকা,২০হাজার টাকার টাকার বোনাস ৫০ হাজার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের গ্রামে ১৫জন ডিপিএস গ্রাহক ও ৩০জন একক গ্রাহক করে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সে। ডিপিএস গ্রাহক প্রতিমাসে ৫০০-১০০০ ও একক গ্রাহক বছরে ৩হাজার,৬হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে জমা দেয়।

তাদেরকে প্রথম কিস্তির রশিদ দিলেও পরবর্তী কিস্তির রশিদ হাতে পায়নি। সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের কাছে কিস্তির টাকা নিলেও রশিদ দেয়নি। রশিদের কথা বললে দেয় দিচ্ছি বলে টালবাহানা করে রেজাউল করিম। অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, তাদের কিস্তির টাকা জমা হয়নি। পলিসিও তামাদি হয়ে গেছে। প্রতারণার শিকার মানুষজন এখন আমাকে ধরছে। বার বার অফিসে ধরণা দিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছিনা।

মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী এলাকার প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহক আনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের এলাকায় আমিসহ প্রায় শতাধিক মানুষ ১২ বছর মেয়াদী বীমার গ্রাহক হই। ৬ হাজার টাকা করে ১২ বছর মেয়াদী ৪টি কিস্তি নিয়ে এক কিস্তির রশিদ দেয়। অফিসে গিয়ে দেখি কিস্তির টাকা জমা হয়নি,পলিসি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতারণার শিকার হয়েছি আমরা। আর কেউ জানি ইন্স্যুরেন্সের নামে প্রতারণার শিকার না হয়।
এভাবে নান্দিনার কবির উদ্দিন,সরিষাবাড়ীর তারাকান্দির রিক্তা বেগম, ভাটারার সবুজ মিয়া, ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের গুঠাইল বাজার এলাকার রহিমা বেগম ও বাসেদ মিয়াসহ অসংখ্য মানুষ প্রতারনা শিকার হয়েছেন।

অভিযোগ পাওয়া যায়, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা রেজাউল করিমের নেতৃত্বে চক্রটি ইন্স্যুরেন্সের চাকুরির আড়ালে জাল সার্টিফিকেট ব্যাবসা, সরকারী চাকুরী দেয়ার নামে প্রতারণা, গ্রাহক ধরার ফাঁদে দেহ ব্যাবসা, মোবাইল ব্যাংকিংসহ নানা প্রতারণামুলক কর্মকান্ড করে আসছে। এ চক্রে রয়েছেন, প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ডিসি নুরী বিল্লাহ নার্গিস, জেইও চৌধুরী মোহাম্মদ লালন শাই ও পিয়ন তাসলিমা আক্তার।
তিনি ইতোমধ্যে প্রায় ১ শতাধিক জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা জাল সার্টিফিকেট দিয়ে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকুরী নেয়া রফিকুল ইসলামের কোড ঘঙ১০১৫১৯৫,রফিক মিয়া কোড হড়১৫১৯৮৮১,রমেছা বেগম ঘড়১০১৫৯২৬ সহ প্রায় শতাধিক লোক জাল সার্টিফিকেটে প্রগতি ইন্স্যুরেন্সে চাকুরী করছেন।

এ ব্যপারে ডিভিশনাল কো-অডিনেটর রেজাউল করিম বলেন, আমার কর্মীরা করেছে। এসবের সাথে আমি সরাসরি জড়িত নই।

(আরআর/এসপি/আগস্ট ১০, ২০১৮)