লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ হত্যাকান্ডের ঘটনায় হয়রানি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে যশোর-কালনা সড়কের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দুই শতাধিক মানুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম মুন, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি মুন্সি আলাউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মাসুদ, যুগ্ম সম্পাদক সিহানুক রহমান, লোহাগড়া পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি স ম ওহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, জাতীয় শ্রমিক লীগ লোহাগড়া পৌর শাখার আহবায়ক মিজানুর রহমান মিন্টু, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মোজাম খান, ছাত্রলীগ লোহাগড়া সরকারি কলেজ শাখার যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আশিক প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে লোহাগড়া পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দিঘলিয়া ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি স ম ওহিদুর রহমান। তিনি বলেন, পলাশ হত্যাকান্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ কর্তৃত আটককৃত তিন জন আসামীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী রেকর্ড করা হয়েছে। কুমড়ি পশ্চিমপাড়ার সৈয়দ ইলিয়াস আলীর ছেলে সৈয়দ আল আমিন (২৭), কোটো শেখের ছেলে শান্ত শেখ (২২) ও সৈয়দ আলী আহম্মেদের ছেলে সৈয়দ রোমান আলী (২২) এবং গোপীনাথপুরের মফিজার শেখের ছেলে গোলাম কিবরিয়া (২৩) পলাশ হত্যায় সরাসরি জড়িত বলে আদালত সূতে জানা গেছে।

গত ২৫ মার্চ লোহাগড়া আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়ালের আদালতে আল আমিন, গোলাম কিবরিয়া ও রোমান আলী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেছে এবং পলাতক শান্তর সম্পৃক্ততর কথা জানিয়েছে। নড়াইলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান প্রযুক্তির সাহায্যে পলাশ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এ হত্যাকান্ডে জড়িত একজন পলাতক আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পলাশ হত্যাকান্ডের সময় তার ভাই সাইফুর রহমান হিলু, মুক্ত রহমান ও তুহিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার যে বর্ণনা দিয়েছেন; তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কেবলমাত্র হয়রানি করার জন্য আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। ১৫জন আসামি করে তাদের হয়রানি এবং পরিবার গুলোর ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে ১৫টি পরিবারের। এ হত্যাকান্ডে জড়িত প্রকৃত খুনিদের নামে চার্জশিট দেয়ার দাবি জানান তিনি।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বাদী নিহত চেয়ারম্যান পলাশের বড় ভাই সাইফুর রহমান হিলু ও চাচাতো ভাই বনি ছিলেন নকশাল। পলাশের ছোট ভাই মুক্ত রহমান এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এই সন্ত্রাসী ও মাদক নিয়ন্ত্রণকারী পরিবারের হাত থেকে আমরা এবং এলাকার মানুষ বাঁচতে চায়। গত ২৪ মার্চ লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় পলাশ দুর্বৃত্তদের হাতে নিহতের ঘটনায় জেলা, উপজেলা ও দিঘলিয়া ইউনিয়য়ন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়ায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া নিরাপরাধ নেতাদের মিথ্যা মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য জোর দাবি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

উল্লেখ্য , গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ১২টার দিকে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে দুর্বৃত্তরা লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক লতিফুর রহমান পলাশকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি নিহত পলাশের ভাই সাইফুর রহমান হিলু বাদী হয়ে ১৫ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে মামলার বাদী সাইফুর রহমান হিলু বলেন, এজাহারে উল্লেখিত আসামিরাই আমার ভাই পলাশকে হত্যা করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার ওসি ((তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলটি অধিকতর তদন্ত শেষে যথাসময়ে চার্জশিট দেয়া হবে।

(আরএম/এসপি/আগস্ট ১১, ২০১৮)