মো: আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : গত ৭ জুলাই মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ২নং মনুমুখ ইউনিয়নের নাদামপুর এলাকার গ্রীনলীফ কেজি স্কুলের সামনে মর্মান্তিক কার-সিএনজি সংঘর্ষের ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ মোট ছয়জন নিহতের ঘটনায় জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝর শুরু হয়। এরপর জেলার সড়ক মহাসড়ক গুলিতে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অনেকে। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে সড়কে দূর্ঘটনা কমাতে এবং সিএনজি অটো রিক্সায় অতিরিক্তি যাত্রী পরিবহন নিয়ে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে থেকে বেশ করাকরি  আরূপ করে। 

ধারনা করা হচ্ছে এর পর থেকে গত মধ্য জুলাই থেকে হঠাৎ করেই শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের সামনে সহ অন্যান্য সড়কে পুলিশের বিভিন্ন চেকপোষ্টে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান জোরদার করে। অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকলেও এতদিন সিএনজি অটোরিক্সায় পাঁচজন যাত্রী নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন কোন বাঁধা না আসলেও হঠাৎ করে তিনজনের বেশি যাত্রী নেয়া নিয়ে পুলিশ করাকরি আরোপ করে। রেজিষ্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা এবং তিনজনের বেশি যাত্রী না নেয়া সহ বিভিন্ন কারনে মামলা এবং গাড়ি আটক করেন দ্বায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে সড়কে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের মাঝে ক্ষোভের পাশাপাশি আতঙ্কও তৈরি হয়। ধারনা করা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সড়ক মহাসড়ক গুলিতে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পুলিশের এমন করাকরি। তবে আইনত সিএনজি অটোরিক্সায় তিনজনের বেশি যাত্রী না নেয়ার বিধান থাকলেও এ নিয়ম দীর্ঘদিন যাবত চালকরা পালন না করায় তাদের কাছে এটি প্রায় নিয়মে পরিনত হয়ে আসছে।

গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া, প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র না থাকা এবং মোটর সাইকেল এর চালকের হেলমেট না পরার কারনে গত কয়েক সাপ্তাহ যাবত মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিক্সা , মোটরসাইকেল সহ অন্যান্য যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের এমন প্রদক্ষেপকে হঠাৎ করে দূর্ভোগের কারন মনে হলেও সাধারণ মানুষ পুলিশের এমন প্রদেক্ষপকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। এসব কারনে পুলিশের উপর ক্ষুব্ধ জেলা সিএনজি অটোরিক্সা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

এনিয়ে গত ৪ আগষ্ট শনিবার শ্রীমঙ্গল সড়কের সামনে জেলা আটো টেম্পু অটোরিক্সা বেবি সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যেগে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সদর উপজেলার কয়েকশ শ্রমিক অংশগ্রহণ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

সমাবেশে জেলা আটো টেম্পু অটোরিক্সা বেবি সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা আজিজুল হক সেলিম বলেন, সড়কে আমাদের শ্রমিকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে। সিএনজিতে ৩ জনের বেশি যাত্রী নিতে পারবেনা এমন যুক্তি দেখিয়ে চালকদের প্রতিনিয়ত হয়রানী করছে পুলিশ । এসময় তিনি সড়কে নৈরাজ্য চলছে জানিয়ে শ্রমিকদের হয়রানী সহ শোষন বন্ধের দাবী জানান।

এদিকে পুলিশের অভিযানের ভয়ে অবৈধ সিএনজি অটোরিক্সা বের করছেন না চালকরা , এর কারনে দিনদিন কমছে সড়কে অবৈধ সিএনজি গাড়ির সংখ্যা। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল মৌলভীবাজার সড়কে কমছে সিএনজির সংখ্যা । এই সড়কে সাধারণ মানুষ নিরাপদ ও আরাম দায়ক হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত সিএনজি অটোরিক্সায় চলাচলে অভ্যস্ত হলেও হঠাৎ করে সিএনজি কম থাকায় সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় গন্তব্যে ছুটছেন শ্রীমঙ্গল থেকে শেপুরপুর পর্যন্ত সহ অন্যান্য সড়কে চলাচলকারী বাস মিনিবাস দিয়ে। অপর দিকে এই সড়কে সিএনজি অটোরিক্সা কম থাকায় বাড়ছে মিনিবাসের সংখ্যা ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ, বেড়িরপার ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করা মিনিবাসগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চালকেরা গাড়ি ছাড়ছেন, আগে যেখানে যাত্রীর জন্য মিনিবাসগুলোতে হাহাকার চলতো এখন দিন ফিরেছে এসব গাড়ির চালকদের, এসব মিনিবাসে হটাৎ যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় চালক থেকে শুরু করে হেলপাররাও আনন্দিত।

এবিষয়ে জেলা আটো টেম্পু অটোরিক্সা বেবি সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম বলেন, সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের ব্যাপারে তিনজনের যায়গায় ৪-৫ জন যাত্রী নেয়ার যে অভিযোগ মানলাম সেটা সত্য তবে মিনিবাসগুলোতেওতো অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হচ্ছে, কই তাদেও বিরুদ্ধে কেন প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। তিনি বলেন আসলে গত কয়েকদিন যাবত প্রশাসনের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আমাদের উপর পুলিশ বৈসম্য করছে। তিনি আরো বলেন, অনেক মিনিবাস ৩০ সিটের হলেও সেখানে এসব গাড়ির মালিকেরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ৫০ সিট করেছেন এবিষয়ে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। আজিজুল হক সেলিম বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আনতে হলে সকল প্রকার যানবাহনকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, শুধু সিএনজি আর মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই সড়কে শৃঙ্খলা আসবেনা।

সড়কে বাসের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় মৌলভীবাজার জেলা বাস মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সঞ্জিত কুমার দেব এর সাথে, এপ্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, দীর্ঘদিন যাবত মৌলভীবাজার শেরপুর সড়কে প্রায় ৪০-৫০টি বাস চললেও সিএনজি অটোরিক্সার সংখ্যা বাড়তে থাকায় কমতে থাকে বাসের সংখ্যা। তিনি বলেন এসব কারনে সড়কে বাসের সংখ্যা কমে ২০-২৫ এ গিয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে বাসের সংখ্যা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, সড়কে যাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালকরা না নামায় এব্যাপারে তাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সঞ্জিত কুমার দেব বলেন এটি দেখার দ্বায়িত্ব প্রশাসনের তারা ব্যবস্থা নেবে।

(একে/এসপি/আগস্ট ১২, ২০১৮)