স্টাফ রিপোর্টার : তৈরি পোশাক খাত রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিধি-বিধান জ্ঞান কম। ফলে বিলম্ব রফতানির কারণে অর্থায়নে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এ খতে অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৬ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা পোশাক খাতের অর্থায়নে বড় বাধা বিলম্ব রফতানি। আবার রফতানিকারকরা সঠিক কাগজ-পত্র উপস্থাপন না করার কারণে অর্থায়নে জটিলতা তৈরি হয় বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ ব্যাংকার। তাই তৈরি পোশাক খাতের অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

রবিবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনস ইন আরএমজি বাই ব্যাংকস: রিস্কস অ্যান্ড মিটিগেশন টেকনিকস’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

তিনি ব্যাংকিং কার্যক্রমে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য সেবা দক্ষতা এবং কমপ্ল্যায়েন্স পুরোপুরি পরিপালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

গবেষণা কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহমুদ হোসেন, বিকেএমইএ দ্বিতীয় সহ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন প্রমুখ।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিজিএমইএ পরিচালক মনির হোসেন, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক অন্তরা জেরীন, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ. টি. এম নেসারুল হক, বিকেএমইএ-এর সহযুগ্ম সম্পাদক ফারুক হোসেন ফারুক হোসেন।

মূল প্রবন্ধে আহসান হাবীব বলেন, গ্রাহকদের ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য সেবার মান আগের চেয়ে ভালো। তবে পুরোপুরি কমপ্ল্যায়েন্স মানার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৈরি পোশাক খাতের ওপর। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন দিক প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়।

ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংক খাতের রফতানি কেন্দ্রীক জালিয়াতি কমাতে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিজিএমইএ-এর মতো বিআইবিএমকেও নতুন কোর্স চালুর সুযোগ রয়েছে। এটি বৈদেশিক বাণিজ্যে জালিয়াতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পোশাক খাতের রফতানি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া পুরোপুরি অটোমেশন হলে দীর্ঘ মেয়াদী সুফল পাওয়া যাবে।

অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে ঝুঁকি কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। পোশাক রফতানিতে ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির জায়গা সাব-কনট্রাক্ট। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাব-কনট্রাক্টের বিষয়ে সর্তক হতে হবে।

ইয়াছিন আলি বলেন, দেশ থেকে ঋণের নামে অর্থ পাচার বড় অপরাধ। ব্যাংক কর্মকর্তারা জেনেও অনেক ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারে না। তবে একটি ফাঁস হলে তখন অন্য ঘটনাগুলো সামনে চলে আসে।

এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংককে উদ্যোগ নিয়ে নজরদারি করতে হবে। এতে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা দূর সম্ভব হবে।

এনআরবি ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে দেশে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। রফতানিকারকদেরও নিজস্ব দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।

ব্যবসায়ী ফজলে শামীম এহসান বলেন, নানা কারণে ৬৫ শতাংশ রফতানি নির্দিষ্ট সময়ে করা সম্ভব হয় না। এটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন পোশাক খাতের দক্ষ শ্রমিক সংকটের কারণে এটি হয়।

ব্যাংকার আহমেদ শাহীন বলেন, পোশাক খাতের বাণিজ্য অনেকটা বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। সব নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে সব কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে জেনে বুঝে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাংকার আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আবার গ্রাহকদেরও সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারে।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১২, ২০১৮)