সাইফুল হক মিঠু


সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সাত দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ বেড়ে দশ দিন হয়েছে। মালিকরাও বলছেন, তারা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ করবেন। তবে এত কিছুর পরও সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। 

গত ২৯ জুলাই এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হলে ফুঁসে উঠে ছাত্র সমাজ। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী জাবালে নূর পরিবহনের চালক হেলপারের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থ্যাসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরে তারা।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে। চালকদের নিয়ম কানুন মানতে বাধ্য করা হয়। শাহবাগের মতন ব্যস্ত রাস্তায় রোগীদের জন্য ইর্মাজেন্সি লেনের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীরা। নাগরিকদের আন্দোলনের কয়েকদিন নিয়ম নীতি মেনে গাড়ি, মোটরসাইকেল চালাতে দেখা গেছে। এমনকি পথচারীরাও নিয়ম কানুন মেনেছেন। তবে আন্দোলন শেষ হবার পর সাধারণ নাগরিকরা নিজেদের প্রকৃত রুপে ফিরেছেন। নিয়ম কানুন না মেনে উল্টো পথে চলছেন অনেকেই।

রাজধানীসহ সারাদেশের পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য সবারই কম বেশী জানা। সারা দেশে অবৈধ চালকই আছেন প্রায় ১৭ লাখ, আর শুধু ঢাকাতেই স্বীকৃত মতে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা সোয়া দুই লাখের বেশি। এছাড়া সড়কে চাদাঁবাজি তো ওপেন সিক্রেট। পরিবহন সেক্টরে মাফিয়ার দৈরাত্ব না কমলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো মুশকিল।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, চলতিব ছরের মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় নিবন্ধিত প্রাইভেট কারের সংখ্যা দুই লাখ ৫৪ হাজার ৮৯২টি। জিপ রয়েছে ৩৩ হাজার ৬৪৩টি। ২০১৭ সালে ঢাকায় দৈনিক গড়ে ৫৩টি প্রাইভে টকার নিবন্ধিত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৯০ দিনে নিবন্ধিত হয়েছে চার হাজার ৬৪৩টি। ঢাকায় মাইক্রোবাসও বাড়ছে। মোবাইল অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা প্রসারে রাজধানীতে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা।

এইসব যানবাহনের চালকরা যদি নিয়ম কানুন মেনে গাড়ি চালান, একই সাথে পথচারীরাও যদি সহযোগিতা করেন তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশই কমবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা যে নিয়ম কানুন মানতে পারি তার প্রমাণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগকে সম্মান দেখিয়ে আমাদের উচিৎ নিয়ম নীতি মেনে সড়কে চলাচল করা। এত কিছুর পরও যদি সচেতন না হই, তবে সচেতন হব কবে?

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী