রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এক চিংড়ি ঘেরে ব্যবসায়িকে পিটিয়ে, খুচিয়ে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত দু’ টোর দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের পার্শ্বেমারী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে।

আটককৃতরা হলেন, একই এলাকার আব্দুল্লাহ গালিবের ছেলে মুজিবুল্লাহ জোয়ার্দ্দার ও মৃত. আকিজ উদ্দীনের ছেলে নজরুল ইসলাম।

ডনহতের নাম ছাত্তার জোয়ার্দ্দার(৬২)। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পার্শ্বেমারি গ্রামের মৃত আব্দুল আবদুল ওয়াজেদ জোয়ার্দ্দারের ছেলে।

নিহতের ভাই সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার জানান, গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের টাকা চুরির ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে দূর্ণীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন প্রথম ইউপি নির্বাচনে জয়লাভ কারি আওয়ামী লীগ নেতা ও তৎকালিন ইউপি চেয়ারম্যান জিএম শফিউল আযম লেনিনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় দু’দক আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন লেনিনের বিরুদ্ধে। সেখান থেকেই লেনিন ও তার পরিবারের সদস্যরা তার ও তার পরিবারের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। এরই জের ধরে তার ভাই শাহানুরের বাড়িতে ডাকাতি করিয়ে লেনিন বাহিনীর সদস্যরা তার হাত ভেঙে দেয়। তার ভাগ্নে ইছহাক গাজীর দু’ পা, ভাগ্নে আব্দুর জব্বারের এক হাত ও এক পা,ও মান্নান সানার দু’ পা ভেঙে দেওয়া হয়। মান্নান সানার পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় থানা মামলা নিলেও অন্য তিনটি ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি। একপর্যায়ে লেনিনের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তাদের নয় ভাইয়ের বাড়িঘর ভেঙে দিয়ে বিরান ভুমিতে পরিণত করায় তাদেরকে এলাকা ছাড়তে হয়। তবে তার বড় ভাই ছাত্তার জোয়ার্দ্দার নিরুপায় হয়ে একই এলাকার এক ব্যক্তির সাথে যৌথ ঘের করার সুবাদে অধিকাংশ সময় ঘেরের বাসায় থাকতেন।

নিহতের স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে রোববার দিবাগত রাত দু’ টোর দিকে তার স্বামী ছাত্তার জোয়ার্দ্দার পার্শ্বেমারী বিলের ঘেরের বাসায় ঘুমিয়ে থাকাকালিন লেনিন বাহিনীর সদস্য গাবুরা ইউপি’র ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য বাদশা গাইন, তার ভাই, সবুজ গাইন, একই এলাকার নুরুজ্জামান, মোস্তাক আহম্মেদ, মহসিন আলী, আব্দুল মজিদ, সাদ্দাম হোসেন ও মনিরুল ইসলামসহ কয়েকজন ওই ঘেরের বাসায় হামলা চালায়। তারা ছাত্তারকে বল্লম দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে জখম করার পর লোহার রড দিয়ে দু’ পা ভেঙে দেয়। পরে তাকে কুপিয়ে জখম করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আনিছুর রহমান জানান, নিহতের দু’ পায়ের হাড় কয়েকটি জায়গায় ভেঙে গেছে। উরু, হাটুসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো জিনিস দিয়ে খোচানোর চিহ্ন রয়েছে। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে গাবুরা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জিএম শফিউল আযম লেনিন কয়েক বছর আগে সাইফুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে দু’দকে মামলার করার কথা স্বীকার করেই বলেন, সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম মিলনসহ চার ভাই জামায়াতের দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। তারা সব কটি’ ভাই তাদেরই শরিক গাগরামারি গ্রামের আসাদুল আল গালিব ও তার ছেলে মহিবুল্লাহ হত্যা মামলার আসামী। এ ছাড়া তাদের কয়েক ভাইয়ের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ছয়টি হত্যা মামলা রয়েছে। নিজেদের পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে সাইফুল ইসলাম ও তার ভাইয়েরা ছাত্তার হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

শ্যামনগর থানার (ওসি) তদন্ত জিয়াউর রহামান জানান, নিহত ছাত্তার জোয়ার্দ্দারের লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরতলীর মাগুরা দাসপাড়ায় অথবা গ্রামের বাড়িতে লাশের দাফন শেষে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দেওয়া হবে। ছাত্তার হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মুজিবুল্লাহ ও নজরুল নামের দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১৩, ২০১৮)