স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা বঞ্চিত প্রসূতি গাছ তলায় সন্তান প্রসব ঘটনায় দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। অন্যদিকে ঘটনা ধামাচাপা দিতে আলোচিত প্রসূতিকে এক রাত রেখেই ছাড়পত্র দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দোষী নার্সদের শাস্তি’র দাবীতে স্থানীয় নারীরা ঝাড়– নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এ দিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে  আজ সোমবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

ফুলবাড়ী উপজেলা সংলগ্ন পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের বাসীন্দা রিক্সা চালক আবু তাহেরের স্ত্রীর রিনা বেগম (৩৩) প্রসব ব্যাথা শুরু হলে,গত রোববার (১২ আগষ্ট) ভোর সাড়ে ৫টায় ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।

সেখানে কর্মরত নার্স ( সেবিকা) রোজিনা আক্তার ও আফরোজা খাতুন, প্রসব ব্যাথায় ছটফট করা আবু তাহেরের স্ত্রী রিনা বেগমকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না করে, একটি বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। সেই সাথে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয়তলা থেকে প্রসূতিকে নামিয়ে দেন তারা। এর পর রোগীর প্রসব বেদনা আরো তীব্র হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের এক দোকান্দারের মা এগিয়ে আসে। তার সহযোগিতায় খোলা আকাশের নিচে এক কামরাঙ্গা গাছের নিচে ঘাসের উপর জনসম্মুখে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয় আবু তাহেরের স্ত্রী রিনা বেগম।

এ ঘটনা জানাহানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এনামুল হকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির অন্য সদ্যরা হলেন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সঞ্জয় কুমার গুপ্ত ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। অপরদিকে সিভিল সার্জন পৃথকভাবে গঠন করেন আরেকটি তদন্ত কমিটি। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সঞ্জয় কুমার গুপ্তর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, পরিবার পরিকল্পনা মেডিকেল অফিসার ডাঃ রইচ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ মুহর্তেমা ফাতেমা। তদন্ত প্রতিবেদন ৩ কার্য্যদিবসের মধ্যে জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত নার্সদের তিনটি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে (১) তারা প্রসুতি রোগীকে সর্তকতার সাথে সেবা দেয়নি, (২) রোগীর অবস্থা কি সে বিষয়ে কোন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেনি ও চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ না করেই একটি বেসরকারী হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। যা চিকিৎসক ছাড়া তারা অন্য জায়গায় রোগীকে রেফার্ড করতে পারেনা।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সিভিল সার্জনের সাথে পরামর্শ করা হয়েছে, সিভিল সার্জনের পরামর্শে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সঞ্জয় কুমার গুপ্তকে আহবায়ক করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসলেই অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, জেলা প্রশাসক এর পরামর্শে সহকারী কমিশনার ভূমি এনামুল হককে আহবায়ক করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এসএএস/এসপি/আগস্ট ১৩, ২০১৮)