সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর আঞ্চলিক ইউনিয়নে এক সনাতন ধর্মালম্বী তাঁত শ্রমিকের স্ত্রীকে জোড় পূর্বক ধর্ষণ করায় অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতা বিরুদ্ধে। আওয়ামীলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবুলকে গ্রাম্য সালিশে সামাজিক, আর্থিক তথা সামগ্রীক সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিনিয়র আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই সালিশ বৈঠকে এ নেতাকে দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে।

দুই সন্তানের জননী ধর্ষিত ঐ গৃহবধূর অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানান, গোপরেখী গ্রামের মাস্টার পাড়ায় তাদের বাড়ি। তার কাকি শ্বাশুড়ী মৃত রনজিৎ মোদকের স্ত্রী জ্যোসনা রানীর সাথে পরকিয়া সম্পর্ক ছিল দৌলতপুর আঞ্চলিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পাশ্ববর্তী গোপালপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবুলের। বাড়ির মধ্যে মাঝে-মাঝে এমন অবাধ সম্পর্ক দেখে তা নিষেধ করায় এ নিয়ে ভিতরে-ভিতরে দ্বন্ধ চলে আসছিল অমৃত চন্দ্র মোদকের নির্যাতিতা স্ত্রীর সাথে।

এরপর হাবুল বাড়ি এসে তাকে বলে এমপি মজিদ মন্ডলের দেয়া ভিজিএফ কার্ড ও ৫শ টাকার নাম তাকে দেয়া হবে। হঠাৎ গত ৩০ জুলাই বেলা দুপুরে অঝোরধারায় বৃষ্টি নামার সময় বাড়িতে আসে হাবুল। তখন কাকি শ্বাশুড়ী জ্যোসনা রানী হাবুলের কাছ থেকে ত্রানের কার্ড নেবার জন্য তার ঘরে আসতে বলে। এ সময় ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই জ্যোসনা রানী বাইরে বের হয়ে ঘরে শিকল আটকিয়ে দেয়। এরপর ঐ গৃহবধুকে জোড় পুর্বক ধর্ষন করে। বাধা দেয়ায় তাকে মারধর ও হাতের সাঁখা ভেঙ্গে ফেলা হয় ও একথা কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেয় বলে ধর্ষিতা গৃহবধূ অভিযোগ করেন।

বিষয়টি তার মাধ্যমে জানাজানি হলে বেলকুচি ও এনায়েতপুর থানা জুড়ে ব্যাপক নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। পরে নির্যাতীত স্ত্রীর স্বামী অমৃত মোদক ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সাবেক মন্ত্রী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাসসহ দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমাজপতিদের কাছে অভিযোগ দিলে গত সোমবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বাড়ি বেলকুচির কামারপাড়ায় এক জনাকীর্ন সালিশ বৈঠক বসে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফজী খান, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল হামিদ আকন্দ, বেলকুচি পৌরসভার মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস, দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাফ হোসেন, এনায়েতপুর থানার দৌলতপুর আঞ্চলিক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ মন্ডল, সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল আলম মাষ্টার, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি সহ শতাধীক মানুষ।

এরপর উপস্থিতির সামনে নির্যাতিতা ঐ নারী বিষয়টি অবহিত করলে সবাই হতভাগ হয়ে যায়। এরপর দোষ স্বীকার করেন লম্পট হাবুল। পরে জুড়ি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্যাতিতা ঐ নারীকে মা বলে পা ধরে ক্ষমা চান লম্পট হাবুল। করা হয় ৫ লাখ টাকা জরিমানা। এছাড়া দল এবং পদ থেকে করা হয় বহিস্কার। এরপরও আজীবনের জন্য নির্যাতিতার বাড়ির আশপাশ তথা ঐ মাষ্টার পাড়া যেতে তাকে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর সবই মেনে নেন লম্পট হাবুল। যা গ্রাম্য সালিশে দৃষ্টান্ত মনে করে উপস্থিত সবাই। বিচার পেয়ে সন্তুষ্টির কথা জানান অমৃত চন্দ্র মোদক। তিনি জানান, আমি যথাযথ বিচার পেয়েছি। লতিফ বিশ্বাস আসলেই মহামানব একজন রাজনীতিবিদ। তিনিই প্রকৃত জনবান্ধব মানুষ। এই বিপদের সময় নির্যাতীত হয়েও পুনরায় হামলার ভয়ে যখন আমরা বাড়ি যেতে পারছিলাম না, তখন তিনি নিজ বাড়িতে আমাদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন। তার জন্যই কেবল আমরা ন্যায় বিচার পেলাম। ভগবান তাকে দীর্ঘায়ু করুক।

দৌলতপুর আঞ্চলিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব মুহুরি বলেন, দলের নেতার কুকর্মের এমন কঠিন বিচার হয়ায় আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তী আরো উজ্জল করেছে। এরকম কুকর্ম ব্যাক্তিকে দলে না রাখাই ভালো। একমাত্র আমাদের দলেই অন্যায়কারীর কোন ক্ষমা ও প্রশ্রয় নাই। লতিফ বিশ্বাস অসহায় সংখ্যলুঘু পরিবারের প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তা আসলেই দৃষ্টান্ত। আমরা চাইবো কোন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর দ্বারা যেন এমন নারী নির্যাতনের মত ঘটনা আর না ঘঠে।

এদিকে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ একেএম ইউসুফজী খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, এধরণের ঘটনা হয়েছে কিনা আমি জানি না।

(এমএসএম/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০১৮)