দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত দু’জন নার্সের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরের খোলা স্থানে প্রসূতির সন্তান প্রসব ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার থেকে তদন্ত শুরু করেছেন।

বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভুক্তভোগী নারীসহ তার পরিবারের সদস্য এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তবে তদন্ত কমিটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলাকালে দোষি নার্সদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ এলাকাবাসী সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে বিক্ষোভ-সমাবেশসহ স্থানীয় নিমতলা মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, সহ-পরিচালক ডা. মো. মাহবুব হাসান সদস্য সচিব ও নীলফামারির সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু জাফর কামরুল ইমান সদস্য।

তদন্ত শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্ত কার্যক্রম আগামী সাত কর্মদিবস পর্যন্ত চলবে। তবে অভিযুক্তরা তদন্তে দোষি প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

‘এদিকে একই ঘটনায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. এনামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদসে তদন্ত কমিটি এবং সিভিল সার্জনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সঞ্জয় কুমার গুপ্তর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিলেন না। তবে ঘটনাটি জানার সাথেই ওই প্রসূতিকে মহিলা ওয়ার্ডে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তবে কর্তব্যরত নার্স রোজিনা আক্তার ও আফরোজা খাতুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা প্রসূতি রিনা পারভীনের অবস্থা সম্পর্কে কোন চিকিৎসককে না জানিয়ে নিজেরাই পেটে টিউমার অবিস্কার করে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসেবা দেওয়া সম্ভব না বলে স্থানীয় একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধিন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়া কথা বলে দোতলা থেকে জোরপূর্বক নিচে নামিয়ে দিয়েছে এমন তথ্য তদন্ত কমিটি পেয়েছে।

চিকিৎসক ছাড়া কোন নার্স কোন রোগীকে অন্যত্র রেফাড করাতে পারেন না। নার্স দু’জন যা করেছেন তার সবগুলোই চাকরিবিধি পরিপন্থি এবং অপরাধের সামিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা সহকারি কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসলে দোষি নার্সদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (১২আগস্ট) সকালে পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের রিকশা চালক আবু তাহেরের অন্ত:স্বত্ত্বা স্ত্রী রিনা পারভীনের (৩৫) প্রসব বেদনা উঠলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত নার্স রোজিনা আক্তার ও আফরোজা খাতুন ওই প্রসূতিকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেকের কোন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ না করে নিজ খেয়ালখুশি মতো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের করে দিয়ে স্থানীয় একটি ব্যক্তি মালিকানাধিন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়া কথা বলেন। পরে প্রসব বেদনায় কাতরাতে শুরু করলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চত্বরেই খোলা স্থানে ওই প্রসূতি একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন।

(এসিজি/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০১৮)